নাটোরের স্কুলে সাপ আতঙ্ক!

নাটোরের স্কুলে সাপ আতঙ্ক!

নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল সোনাপুর পমগ্রাম। এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। তবে কয়েকদিন ধরে ‘সাপ আতঙ্ক’ ভর করেছে কোমলমতি শিশুদের মাঝে! সাপের ভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীই।

শ্রেণিকক্ষের ভেতরে, বাইরে, বারান্দায়, টেবিল-বেঞ্চের নিচে এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ভিতর থেকে আচমকাই বের হচ্ছে ছোট-বড় বিষধর সাপ!

গেল বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩০টি সাপ বের হয়েছে বিদ্যালয়টি থেকে।

তাই একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। অনেক অভিভািবকই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। যারা পাঠাচ্ছেন, তারা সন্তানের হাতে একটি লাঠিও তুলে দিচ্ছেন। আর এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ক্লাস।

আকস্মিক সাপের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে বারান্দাতে ক্লাস চলার সময় লাঠি, বাঁশ ও লোহার পাইপ হাতে পালা করে পাহারা দিচ্ছে অনেক শিশুই। শুধু বিষধর সাপের উপদ্রব নয়। এর সাথে যোগ হয়েছে শুয়ো পোকা (এ্যঁচা) ও গুই সাপসহ বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের। গোটা স্কুল ভবন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শুয়ো পোকা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুয়ো পোকার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এসব কারণে অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন গত দু’দিন ধরে। শতভাগ উপস্থিতির এই স্কুলে গেল দু’দিন অর্ধেক শিশুও স্কুলে আসেনি বলে স্বীকার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

news24bd.tv

সরেজমিনে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর ঠিক আগেই ১ম শ্রেণির কক্ষের সামনে দুইটি সাপ মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পাশের ২য় শ্রেণির কক্ষে ইংরেজি ক্লাস চলার সময়ই দরজায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ৫ম শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল। তার তীক্ষদৃষ্টি শ্রেণিকক্ষের সর্বত্র। কোনদিক থেকে সাপ বের হলেই সেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে।  

হাসিবুলের মতো আসিফ, মারুফ, সাজিদ. রাব্বি, সবুজরা পালাক্রমে নিজেদেরসহ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পাহারা দিচ্ছে এভাবেই। ওয়াদুদ নামে ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রকে কামড়াতে এলে তার চিৎকারে এগিয়ে এসে তারা সাপটি মেরে ফেলে।

মারুফ জানায়, ‘গত তিনদিনে ৩০টি সাপ মেরে ফেলেছি আমরা। সাপগুলো কোনদিক দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকছে তা বুঝতে পারছি না। ১ম ও ৩য় শ্রেণির কক্ষ থেকে বেশি সাপ বের হচ্ছে। ’

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিলকিস আক্তার, সুমাইয়া ও মিথিলা জানায়, প্রতিদিনই স্কুলে সাপ চোখে পড়ছে। সাপের ভয়ে অনেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদেরও স্কুলে আসতে বাড়ি থেকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। ’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রমজান আলী জানান, ‘হঠাৎ সাপের উপদ্রবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই আতঙ্কিত। শিশুরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে চলেছে। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল বন্ধ হবার উপক্রম হবে। ’

প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম সাপ ও পোকা মাকড়ের উপদ্রবের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘সাপের উপদ্রবের ব্যাপারে মৌখিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেননি।

এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শোনেন নি বলে জানান। তবে সাপের উপদ্রব রোধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে স্কুলটি বন্ধ রাখা হবে। ’


নাসিম/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর