এ সময় চর্মরোগ বিষয়ে সতর্কতা

সংগৃহীত ছবি

এ সময় চর্মরোগ বিষয়ে সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক

এখনো বর্ষাকাল চলছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে ত্বকের মাধ্যমে দেহের ভাইটাল অর্গানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। চামড়ায় স্যাঁতসেঁতে অবস্থা বা ভেজা থাকলে ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ইনফেকশন তৈরি করতে পারে তুলনামূলকভাবে সহজে। তাই এই সময়ে চর্মরোগ বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার

ত্বক বা চামড়া হলো শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। এর মূল কাজ হলো : 

  • বাইরের আঘাত থেকে শরীরকে রক্ষা করা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অন্য কোনো পরজীবী বা অনুজীবীর আক্রমণ থেকে শরীরের ভাইটাল অথবা প্রধান অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া 
  • শরীর থেকে যেন তাপমাত্রা বেরিয়ে যেতে না পারে সেটার সমতা বজায় রাখা। ফলে বাইরের প্রাকৃতিক তাপমাত্রার হেরফের হলেও শরীরের তাপমাত্রা কিন্তু গড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকে।
  • ইলেকট্রোলাইটসহ দরকারি জিনিস শরীর থেকে যেন বেরিয়ে না যায় সেগুলোর সুরক্ষা দেওয়া।
  • ধুলাবালি থেকে শুরু করে অন্যান্য কেমিক্যাল পদার্থ চামড়ার মধ্যে লেগে যেন ক্ষতি না করে সেটা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

এই সময়ের চর্মরোগ
বর্ষাকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ দেখা যায়। এসব চর্মরোগ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা ছত্রাক এবং কিছু কিছু অণুজীব ও পরজীবীর দ্বারা হয়। কিছু রোগ হয় ট্রমাটিক বা আঘাতজনিত কারণে আর কিছু রোগ হয় তাপমাত্রাজনিত ও শরীর স্যাঁতসেঁতে থাকার কারণে।

ব্যাকটেরিয়াজনিত
বর্ষাকালে ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত চর্মরোগগুলো মূলত হয় এই সময়ে মানুষের শরীর স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকা বা ভেজা অবস্থার কারণে। এই ভেজা স্থানে কোনো কারণে চুলকানি হলে এবং ওই স্থানে চুলকালে রক্তপাতের মতো অবস্থা তৈরি হয়। তখন ওই রক্তক্ষরণের স্থানে ব্যাকটেরিয়া জমে সংক্রমণ তৈরি করে। এর কারণে ত্বকের প্রদাহ, পুঁজ জমা হওয়া, ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি হয় ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। এর মূল কারণ শরীর স্যাঁতসেঁতে থাকা বা ভেজা থাকা, বিশেষ করে শরীর ঘেমে গেলে তখন সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল না করলে সেই পরিবেশে সহজে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয় এবং ছত্রাকজনিত ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। একে টিনিয়া বা রিংওয়ার্মও বলে।

ভাইরাসজনিত
কিছু কিছু ভাইরাসজনিত চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় বর্ষাকালে। যেমন—প্যাপিলোমা, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ আবারও দেখা যায় এবং ফের ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হয়।

খোসপাঁচড়া
স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া একটি ছোঁয়াচে রোগ, যাতে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষাকালে এজাতীয় চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। অনেক সময় একজন থেকে পুরো পরিবার আক্রান্ত হতে পারে। চুলকানি হলো এর প্রধান উপসর্গ। রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা বেড়ে যায়। ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ঘাও হতে পারে।

অ্যালার্জি
বর্ষাকালে নানা ধরনের অ্যালার্জিরও প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকেরিয়া অন্যতম। শরীরের ওপর অ্যান্টিজেনগুলো যেমন—ধুলাবালি, ফুলের রেণু বা অন্য যা কিছু হোক না কেন, তা যখন চামড়ার সংস্পর্শে আসে, তখন এক ধরনের অ্যালার্জিক কন্ডিশন তৈরি করে। বৃষ্টির পানি বা ঘামের কারণেও এটা হতে পারে। এগুলো ছাড়াও বর্ষাকালে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসসহ আরো অনেক ধরনের চর্মরোগ হতে পারে।

চিকিৎসা
বর্ষাকালে ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে প্রাথমিকভাবে অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, শ্যাম্পু বা সাবান ব্যবহারও করতে হয়। এতে কাজ না হলে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়। সাধারণত পেনিসিলিন, ফ্লুক্লক্সাসিলিন, মক্সাসিলিন সেফুরক্সিম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ৭ থেকে ১০ দিন খেলে এজাতীয় চর্মরোগ ভালো হয়ে যায়। অ্যালার্জির কারণে অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে হয়। এতে সন্তোষজনক ফল না পেলে অনেক সময় মাত্রা অনুযায়ী স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাজনিত অ্যান্টিফাঙ্গাল সমস্যায় বিভিন্ন ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হচ্ছে।

প্রতিরোধে করণীয়

  • সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাবান দিয়ে প্রতিদিন শরীর ধৌত করুন।
  • ভেজা শরীর ভালোভাবে মুছুন।
  • কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দেবেন না।
  • ভারী জামাকাপড় না পরে হালকা রঙের সুতির পাতলা জামা পরুন।
  • বিছানায় ব্যবহৃত কম্বল, বালিশ, চাদর বা অন্যান্য আসবাব মাঝে মাঝে রোদে দিন।
  • স্যাঁতসেঁতে ঘরে বা ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করবেন না।
  • পা, আঙুলের ফাঁক, যৌনাঙ্গ ও এর পাশের ত্বক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • আক্রান্ত রোগীর বিছানায় একসঙ্গে শোবেন না কিংবা তার ব্যবহারকৃত কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না
  • চামড়ার ভাঁজ বা কুঁচকি যেন ভেজা না থাকে বা না ঘামে—সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ভেজা চুল শুকিয়ে নিন ভালো করে। না হলে মাথার ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
  • রাস্তার নোংরা পানি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।

অনুলিখন : আতাউর রহমান কাবুল