মার্কিন ডলারের শক্তিতে আঘাত করছে কি কানাডিয়ান ডলার?

সংগৃহীত ছবি

বৈদেশিক রিজার্ভ

মার্কিন ডলারের শক্তিতে আঘাত করছে কি কানাডিয়ান ডলার?

অনলাইন ডেস্ক

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মুদ্রা মার্কিন ডলার। সেই ১৯৪৪ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও লেনদেনে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে ডলার। শক্তিশালী মুদ্রা হওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশই এটিকে ‘রিজার্ভ মুদ্রা’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন পরিবর্তন হচ্ছে।

খবর ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট

গত এপ্রিলে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে চীনা মুদ্রা ‘রেনমিনবি’ যোগ করেছে। দেশটি নতুন কৌশল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার এবং জাপানিজ ইয়েনের পোর্টফোলিও’র হোল্ডিংও বাড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ডেভিড লেডলার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের মর্যাদা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা পায়।

যখন অন্য দেশগুলো তাদের ডলারের হোল্ডিং বাড়ায়, তখন লেনদেনের স্ট্রিংয়ে জড়িত চূড়ান্ত পণ্য হল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ফেড প্রিন্ট’ কাগজের বিনিময়ে আসল পণ্য এবং পরিসেবা পায়।  

মন্ট্রিল-ভিত্তিক ডসন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ওয়ার্কু আবেরা বলছেন, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, কিন্তু এর প্রভাবটা জটিল। তবে আরও কমে যাওয়া মার্কিন বৈদেশিক রিজার্ভ এবং বর্ধিত কানাডীয় ‘ক্যানকস’ কিছুটা সুবিধা ভোগ করবে।

ওয়ার্কু আবেরা আরও বলেন, এটি একটি শূন্য-সমষ্টির খেলা; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি মানেই ওইসব দেশের জন্য লাভ, যেসব দেশের মুদ্রা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।

অপ্রচলিত মুদ্রার উত্থান
মোট ৪৪ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস কনফারেন্স থেকে অন্যান্য দেশগুলোকে মার্কিন ডলার রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে জমা করার অনুমতি দেওয়া হয়, যা মার্কিন ডলারের আধিপত্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গোটা বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করে থাকে। তারা কেবল সংকটের ক্ষেত্রে তরল মুদ্রা রাখার জন্য এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে তাদের রফতানি মূল্যের জন্য এটি ব্যবহার করে না, বরং তাদের বহিরাগত ঋণ পরিশোধ করতে বা বৈচিত্রপূর্ণ পোর্টফোলিও থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য এই রিজার্ভের প্রয়োজন হয়।

তবে মার্কিন ডলার এখনও প্রভাবশালী হলেও এক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে, যা আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে।

এই উন্নয়নগুলোর মধ্যে একটি হল- পূর্বে অপ্রচলিত হিসেবে বিবেচিত মুদ্রার উত্থান- যা সম্মানসূচক ‘ক্যারেন্সি কম্পোজিশন অব অফিসিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ’ তথা COFER মর্যাদা অর্জন করেছে।

আবেরা টরন্টো স্টারে ৬ জুন মতামত অংশে একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ২০০০ সালে খুব কমই কোনও (বিদেশি) কেন্দ্রীয় ব্যাংক কানাডিয়ান ডলারকে রিজার্ভ হিসেবে রেখেছিল। ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য থেকে জানা যায়, বৈদেশিক রিজার্ভ হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর কাছে ২৮৭ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার রয়েছে।

আবেরা বলেন, যদিও স্বীকার করতেই হবে এটি বিশ্বের মোট রিজার্ভের তুলনায় একটি ছোট ভগ্নাংশ মাত্র। তবে, এটি একটি আন্তর্জাতিক রিজার্ভ হোল্ডিংয়ের স্বাভাবিক টেকটোনিক (গঠন) পরিবর্তনের বেলায় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগী
বৈদেশিক রিজার্ভের মেকআপের পরিবর্তনগুলো শক্তিশালী চারটি মুদ্রার স্থিতাবস্থার তালিকাকে (স্ট্যাটাস-কুও লিস্ট) ব্যাহত করছে। এসব মুদ্রা হচ্ছে- মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন এবং ইউরো। ১৯৯৯ সালে বৈদেশিক রিজার্ভের ৯৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালের হিসাবে ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল বড় চারটি বৈদেশিক রিজার্ভের আধিপত্য।

কানাডা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াও অগ্রসর হচ্ছে। ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের কাছে প্রায় ২২৫.৪৮ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার রয়েছে।

আবেরা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি মানেই অন্যান্য দেশের জন্য লাভ, যাদের মুদ্রা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।

জুনের শেষের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইঙ্গিত দেন যে, রাশিয়া ও ব্রিকসের অন্যান্য সদস্য দেশ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) একটি নতুন আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রার প্রচলন করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সৌদি আরব ও ন্যাটো-সদস্য তুরস্কসহ আরও অন্যান্য দেশও ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে।  
news24bd.tv/আলী