উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের পথে জম্মু-কাশ্মীর

সংগৃহীত ছবি

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের পথে জম্মু-কাশ্মীর

অনলাইন ডেস্ক

সংবিধানের যে অনুচ্ছেদে কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে তা রোহিত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত সরকার।  সংবিধানের সেই ৩৭০ এবং ৩৫/এ অনুচ্ছেদ রোহিত করার দৃঢ় সিদ্ধান্তের পর পেরিয়ে গেছে তিন বছরের বেশি সময়। তবে অল্প এ সময়ের মধ্যেই শঙ্কা দূরে ঠেলে জম্মু-কাশ্মীরে দেখা গেছে উল্লেখ করার মতো বেশকিছু পরিবর্তন।  

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্যটিকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে আলাদা করার পর থেকেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে।

এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো বাণিজ্যের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-উদ্যোগের একাধিক সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সরকার আরও ভারসাম্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মডেল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। উদ্দেশ্য, ৫-৬ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে বিনিয়োগে গতি আনা।  

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরে গত তিন বছরে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২৯,৮০৬ জনকে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি দেয়া হয়েছে।

 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বুধবার রাজ্যসভায় এক লিখিত বক্তব্য বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার ২০১৯  সাল থেকে মোট ২৯,৮০৬ জনকে সরকারি খাতে নিয়োগ করেছে। এছাড়া আগস্ট ২০১৯ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত  আত্মনির্ভরশীল প্রকল্পের মাধ্যমে ৫.২ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

রাই আরও উল্লেখ করেন, জম্মু ও কাশ্মীরে কর্মসংস্থানের হার সম্পর্কে জেলাভিত্তিক তথ্য পাওয়া যায় না যখন কংগ্রেস সাংসদ কপিল সিবাল, রজনী অশোকরাও পাতিল এবং ফুলো দেবী নেতাম জম্মু ও কাশ্মীরে বিস্তারিত কর্মসংস্থানের হার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।  

মন্ত্রী অন্য একটি উত্তরে আরও জানান, সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্যাকেজ-২০১৫ এর আওতায় প্রকল্পগুলোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। সড়ক, রেল, সেতু, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে ৫৮,৪৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি মন্ত্রণালয়ের ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে ২৯টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া কাশ্মীর উপত্যকা এবং এর চারপাশ ঘিরে একটি ট্রানজিট করিডোর আগামী চার বছরের মধ্যে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। যেকোনো মূল্যে উন্নয়ন- এ লক্ষ্য সামনে রেখে ভারত সরকার এই অঞ্চলের জনগণের জন্য উন্নত অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিতে বিশেষ জোর দিয়েছে।

একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল কতটা দ্রুততার সাথে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে তার ওপরই নির্ভর করে সেই অঞ্চলের উন্নয়নযাত্রার অব্যাহত থাকার বিষয়টি। তাই জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ১৫ বছর মেয়াদী একটি নতুন কেন্দ্রীয়-আঞ্চলিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় একটি নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন স্কিম বাস্তবায়ন করা হবে।  

সন্ত্রাসবাদ থেকে নারীদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিয়ে সরকারের একটি দুশ্চিন্তা ছিল। এজন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এসএএটিএইচ প্রকল্প (স্ট্রেনদেনিং অ্যান্ড মেনটরিং ওমেন এসএইজি অব জেঅ্যান্ডকে)। নারী উদ্যোক্তারা যাতে তাদের ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এবং নিজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেজন্য তাদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায়।  

এরইমধ্যে প্রকল্পটির সফলতা মিলতে শুরু করেছে। কয়েক বছর আগেও যেসব অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের দাপট ছিল, সেসব এলাকায় উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে নারীবান্ধাব একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেও নজর দিয়েছে কেন্দ্র। এরই মধ্যে কাংক্রম শুরু করেছে ইনডিয়ান ইনিস্টিটিউট অব টেকনলজি জম্মু এবং ইনডিয়ান ইনিস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট জম্মু। স্নাতক এবং প্রকৌশল পর্যায়ের সরকারি কলেজের সংখ্যা ৯৬টি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৭টি।

এসব উদ্যোগের ফলে প্রশাসনের ওপর জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব হয়েছে। ভারত সরকারের নেওয়া সমন্বিত উদ্যোগ একটা সময় এ অঞ্চলের মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হবে আশা করা যায়।  

news24bd.tv/আলী