সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের লিটার ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা, অকটেনের লিটার ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রোলের লিটার ৮৬ থেকে করা হয়েছে ১৩০ টাকা। দেশে জ্বালানি তেল এর হঠাৎই এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে তেলের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাস করার প্রক্রিয়া সব দেশেই চলমান। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু যৌক্তিক এই মূল্যবৃদ্ধি?
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ থেকে ১৩৯ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
পরবর্তীতে মার্চে তা বেড়ে ১৫৬ দশমিক ৩ ডলারে গিয়ে পৌঁছায়। তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি ছিল গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথেই দেশে দাম বাড়ানো হয়নি। ফলে শুধু গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) জ্বালানি তেল বিক্রয়ে (সকল পণ্য) ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।এছাড়া জ্বালানি তেল এমন মূল্যবৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশেই নয়, আমাদের আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২২ মে কলকাতা ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোলের লিটার প্রতি ১০৬.৩ রুপি নির্ধারণ করে ভারত সরকার যা এখনো বিদ্যমান। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় (১ রুপি সমান গড় ১.২৩ টাকা ধরে) যথাক্রমে ১১৪.৯ টাকা (ডিজেল) এবং ১৩০.৪২ টাকা (পেট্রোল)। অর্থাৎ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪.৯ টাকা এবং পেট্রোলের লিটার প্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। এছাড়া ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার শঙ্কাও ছিল অনেকাংশে।
বিভিন্ন দেশের জ্বালানি তেলের মূল্য (লিটার/টাকায়)
SL | দেশ | ডিজেল (লিটার/টাকায়) | অকটেন (লিটার/টাকায়) |
1. | বাংলাদেশ | ১১৪ | ১৩৫ |
2. | ভারত | ১১০.৯৫ | ১২৩.৬৫ |
3. | চীন | ১১৮.৬৩ | ১৩১.৯৯ |
4. | নেপাল | ১২৭.৮২ | ১৩৪.৫৫ |
5. | পাকিস্তান | ১০৩.৭১ | ১০৬.৬৪ |
6. | সিঙ্গাপুর | ১৮৯.৮৭ | ১৯০.৪৫ |
7. | হংকং | ২৬০.৭৫ | ২৮৪.৭২ |
প্রসঙ্গত, জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে আর কমেছে মাত্র চার বার। এর মধ্যে বিএনপির শাসনামলেই (২০০১-২০০৬) বেড়েছে ৯ বার। তবে বর্তমান সরকারের আমলে জ্বালানি তেলের দাম একাধিকবার কমানোর নজির রয়েছে।
২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। এর আগেও ২০০৯ সালে ১৩ জানুয়ারি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হয়েছিল আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।