১৫ বছর ধরে মায়ের খোঁজে তরুণী

১৫ বছর ধরে মায়ের খোঁজে তরুণী

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

কাজল মুখার্জী। কলকাতার কেষ্টপুরের বাসিন্দা। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি তার মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে হারিয়ে ফেলেন। সে সময় তার ৪ বছর বয়সী ভাই রাহুলকে নিয়ে দ্বিক-বিদ্বিক ছোটাছোটি করেন, কিন্তু মায়ের সন্ধান পাননি।

 

তারপরও পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন মাকে। কাজলের এখন নিজের সংসার হয়েছে। স্বামী ও ৬ বছরের মেয়েকে নিয়েই তার জীবন।  

কাজলের মায়ের নামটাই শুধু মনে আছে- গীতা বিশ্বাস।

কোনো ছবি নেই।

মায়ের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে বুধবার কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে হাজির হন কাজল। হাসপাতালে নথি ঘেঁটে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৬ অগস্ট ৩৫ বছরের এক অজ্ঞাত পরিচয় নারীকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বিমান বন্দর পুলিশ ভর্তি করিয়েছিল হাসপাতালে। মিলে যায় সময়। কারণ, ওই সময়েই কলকাতা বিমান বন্দরের সামনে থেকে তার মাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।

তাহলে কি মা আছেন? দুরু দুরু বুকে এদিন পাভলভ হাসপাতালের কর্মীর সঙ্গে ওয়ার্ডে ঢোকেন কাজল। সেখানকার নথি ঘেঁটে অবশ্য জানা যায়, ভর্তি হওয়ার মাস দশেক পরে শঙ্কর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি এসে তার মাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।

কে এই শঙ্কর মণ্ডল? কাজলের কথায়, ‘জানি না। তবে ছোটবেলায় যখন বিমানবন্দরের চত্বরে থাকতাম, তখন সেখানকার এক মন্দিরে শঙ্কর মণ্ডল নামে একজন কাজ করতেন। কিন্তু তিনি কেন আমার মাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন, বুঝতে পারছি না। ’ পাভলভ হাসপাতালের চিকিৎসক গণেশ প্রসাদ আশ্বস্ত করেছেন, পুরনো নথি ঘেঁটে আরও কোনো তথ্য পেলে জানাবেন। নতুন করে শুরু হবে খোঁজ।

কাজল জানান, তার মায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। তারা আগে জলপাইগুড়িতে থাকতেন। কাজলের বয়স তখন ৭ বছর। মা অন্তঃসত্ত্বা। কাজলের অভিযোগ, বাবার পাশবিক অত্যাচারে মা তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন বাড়ি থেকে। বাপের বাড়ির সাহায্য না পেয়ে ট্রেন ধরে সোজা কলকাতায় পাড়ি জমান।  

কাজল বলেন, ‘মায়ের ওপর এতটাই অত্যাচার হয়েছিল যে, তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ’

কলকাতা শহর ছিল তার সম্পূর্ণ অচেনা। না কোনো বন্ধু, না আত্মীয়। শিয়ালদহের প্ল্যাটফর্মেই বেশ কিছু দিন কেটে যায় তাদের। লোকে সাহায্য করলে খাওয়া জুটতো, নয়তো খালি পেটে শুয়ে পড়তেন মা-মেয়ে।  

এক দিন স্টেশন চত্বর ছেড়ে বাসে উঠে তারা চলে আসেন দমদম বিমান বন্দরে। সেখানে কখনও কর্মীদের ভেঙে পড়া কোয়ার্টার্সের বারান্দায়, কখনও এটিসি বিল্ডিংয়ের নিচে রাত কাটাতেন তারা। বিমান বন্দর লাগোয়া ডাকঘরের সীমানার মধ্যে একটি বারান্দায় পুত্র সন্তান প্রসব করেন কাজলের মা।

কাজলের কথায়, ‘ভাই হওয়ার পর থেকেই মায়ের মানসিক সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। যাত্রীদের, পুলিশদের দেখলেই তেড়ে যেতেন। পুরুষদের সহ্য করতে পারতেন না। ’ 

সেই সময়ে যাত্রীদের কাছে গিয়ে ভিক্ষা করতো ছোট্ট কাজল। তা দিয়েই খাবার জুটতো। এমনই এক সময়ে ২০০৩ সালের অাগস্টে আদালতের নির্দেশক্রমে কাজলের মাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাভলভে।

মা যে পাভলভে থাকতে পারেন, সে কথা কেন মনে হয়েছিল তার? এমন প্রশ্নে কাজলের উত্তর, ‘দুইটি আলাদা গাড়িতে মা ও আমাদের তোলা হয়েছিল। উল্টোডাঙা নামের একটি জায়গায় আমাদের গাড়ি ঘুরে গিয়েছিল সল্টলেকের দিকে। আমাদের রাখা হয়েছিল এসওএস ভিলেজে। আর মায়ের গাড়ি চলে গিয়েছিল কলকাতায়। ’

ভিলেজেই ভাই-বোনের বড় হয়ে ওঠা। সেখান থেকে বেরিয়ে একটি বিউটি পার্লারে চাকরি, তারপর বিয়ে। ভাই এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে থ্রি-ডি অ্যানিমেশন নিয়ে পড়া শুরু করেছে।  

কাজলের কথায়, ‘আমাদের যখন এসওএস ভিলেজে পাঠানো হয়, তখন থানায় অরূপ রায় চৌধুরী বলে এক অফিসার ছিলেন। মাস দুয়েক আগে খবর পাই, তিনি থানার ইনচার্জ হয়েছেন। তার থেকেই জানতে পারি, মাকে পাভলভে ভর্তি করা হয়েছে। ’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর