তিন দশক আগে এক নারী দুই ভাইয়ের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের ফলে ওই নারীর গর্ভে আসে সন্তান। সেই সন্তান এখন বড় হয়েছে। এখন সেই সন্তানই তার মা’র ধর্ষণের বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই করছে।
খবর: বিবিসিপ্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ভারতের উত্তর প্রদেশের শাহাজানপুরের শহরের এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে দুই ভাইয়ের লালসার বলি হন তিনি। এতে গর্ভবতী হয়ে পড়েন ও এক ছেলে সন্তানকে জন্ম দেন ওই নারী।
জন্মের পরই ওই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হয়।
ওই নারী বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অনেক আগের। তবে আমার ক্ষত শুকিয়ে যায়নি। ওই ঘটনা আমার জীবনকে থামিয়ে দিয়েছিল। তখনকার কথা শুধু আমার মনে পড়ে। ’
‘তারা আমার প্রতিবেশী ছিল। যখন আমি একা থাকতাম তারা দেয়াল টপকিয়ে এসে আমাকে ধর্ষণ করতো। এ কথা কাউকে জানালে তারা আমার গোটা পরিবারকে হত্যা করার হুমকি দিত,’ যোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘এই ছেলের জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। এমনকি জন্মের পর আমি তার চেহারাও দেখতে পারিনি। মাকে বলার পর সে বলে,‘‘তুমি জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছো। ’’
ভারতে ধর্ষণ ও শিশুর ওপর নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। এ রকম ঘটনায় প্রতি বছর হাজার হাজার মামলা হয়। শুধুমাত্র ২০২০ সালে শিশু নির্যাতনের ৪৭ হাজার মামলা জমা পড়ে।
সমাজকর্মীরা বলছেন, শিশু ধর্ষণের অনেক ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। কারণ তাদের সঙ্গে কি হয় তারা তা বুঝতে পারে না। এ ছাড়া তারা ঘটনাটি জানাতে ভয় পায়। মান সম্মানের ভয়ে ও অপরাধীরা পরিচিত পরিবারগুলোও প্রায়ই মামলা করে না।
ছেলের যুদ্ধ
জন্মের পরই ধর্ষণে জন্ম নেওয়া ছেলেকে দত্তক দেওয়া হয়। তবে এতে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। নিজের পরিচয় নিয়ে অনেক কটু কথা শুনতে হয় তাকে। কিশোর বয়সে সে তার প্রতিবেশীদের থেকে জানতে পারে যাদের কাছে সে রয়েছে তারা তাকে দত্তক এনেছে।
মা ও ছেলের বিচ্ছেদের ১৩ বছর পর দত্তক নেওয়া বাবা-মা তাকে ফিরিয়ে দেন। তবে এর পরও নিজের বাবার সম্পর্কে জানতে পারেনি ওই ছেলে। তার কোনো উপাধি ছিল না। এ নিয়ে সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।
ক্রমাগতভাবে মাকে বাবার সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতো ওই ছেলে। তবে কোনো উত্তর না পেয়ে সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। এক সময় মাকে সে বলে, ‘আমি এই নামহীন জীবনযাপন করতে পারবে না। বাবার নাম না বললে আমি আত্মহত্যা করবো। ’ এরপরেই ছেলেকে সব খুলে বলেন ওই মা।
তখন ওই ছেলে মাকে মামলার পরামর্শ দেয়। সে বলে, ‘যদি তুমি মামলা করো কি হবে। হয়তো তোমার মতো আরও কয়েকজন মামলা করবে। এতে আমাদের মামলা শক্তিশালী হবে ও অভিযুক্তরা শাস্তি পাবে। অপরাধ করলে কেউ বাঁচাতে পারবে না এটা সবাই বুজবে। ’
ছেলের উৎসাহে ওই মা ২০২০ সালে পুনরায় শাহজাহানপুরে যান ও মামলা করতে চান। কিন্তু থানায় মামলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। পরে তারা তিনি একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনিও বলেন, প্রায় তিন দশক আগে ঘটা একটি ঘটনা নিয়ে মামলা লড়া কঠিন হবে।
পরে আইনজীবী আদালতে একটি মামলা করেন। তাদের আবেদন শুনে শাহজাহানপুরের প্রধান বিচারিক হাকিম পুলিশকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন। ২০২১ সালের মার্চে দুজনকে আসামি করে একটি ধর্ষণের মামলা হয়।
কিন্তু পুলিশ ওই নারীকেই অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে বলেন। পরে ওই নারী তাদের খুঁজে বের করে। পরে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে একজনকে শনাক্ত ও অপরজনকে গ্রেফতার করা হয়।
শাহজাহানপুরের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার এস আনন্দ বলেন, ‘এ মামলা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। যখন ওই নারী সামনে এগিয়ে আসেন এবং মামলা করেন, আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা একটি সুযোগ নেই এবং তার ছেলের ডিএনএ পরীক্ষা করাই। ’
ইন্সপেক্টর ধর্মেন্দ্র কুমার গুপ্তা গত বছর থেকে এই মামলাটি দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই অভিযুক্তের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করি এবং সেগুলো পরীক্ষা করাই। তাদের একজনের সঙ্গে ছেলেটির ডিএনএ মিলে গেছে। যার ভিত্তিতে গত ৩১ জুলাই একজনকে ও গত বুধবার অন্যজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা এখনও দোষ স্বীকার করেনি। ’
news24bd.tv/মামুন