প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডার: মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু 

সংগৃহীত ছবি

প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডার: মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু 

অনলাইন ডেস্ক

মায়ের সঙ্গে খালাতো বোনের বউভাতের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল শিশু জাকারিয়া। প্রাইভেটকারের মাঝখানের সিটে সে তার মায়ের কোলে বসেছিল। মায়ের কোলেই প্রাণ যায় ছোট্ট জাকারিয়ার। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে আহত অবস্থায় বেঁচে ছিল আধাঘণ্টা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা স্বজনের বরাত দিয়ে আত্মীয়রা এ দাবি করেছেন।

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার গাড়ির ওপরে পড়ে। এতে গাড়িতে থাকা ৫ জনের মৃত্যু হয়। বেঁচে যান দু’জন।

গার্ডারটি গাড়িটির দুই-তৃতীয়াংশ জায়গার ওপরে পড়ে। বামপাশের দু’জন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও গাড়িচালকের সিটে বসা রুবেল মিয়া, ফাহিমা বেগম ও তার বোন ঝর্ণা বেগম এবং ঝর্ণার দু’সন্তান ঘটনাস্থলে মারা যায়। শুধুমাত্র বেঁচে ছিল ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী তার স্ত্রী রিয়ামনি।

প্রত্যক্ষদর্শী সজীব হোসেন বলেন, হঠাৎ ক্রেন পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে দেখি গাড়ি গার্ডারের নিচে পিষ্ট হয়ে গেছে। আমরা দ্রুত ওখানে গিয়ে দেখি কয়েকজন জীবিত আছেন। এ সময় শাবল, করাত সংগ্রহ করে গাড়ি কাটা শুরু করলে দু’জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।  

তিনি বলেন, শিশু জাকারিয়া মায়ের কোলে ছিল। গার্ডারটির চাপ ওর পায়ে পড়লেও মাথা ও বুক অক্ষত ছিল, তখনও তাকিয়ে কাঁদছিল। সে সময় তাকে বের করার চেষ্টা করলেও ক্রেনের চাপে বের করা যায়নি। শিশুটির পা কেটে ফেললে হয়তো বাঁচানো যেতো। কিন্তু সে কাজ তো আমরা করতে পারিনা। প্রশাসনের কেউ এগিয়ে আসলে শিশুটি বেঁচে যেতো।

ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই শিশু জাকারিয়ার মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘ চেষ্টার পর একটি যন্ত্রের সাহায্যে গার্ডারটি গাড়ির ওপর থেকে সরানোর সময় শিশু জাকারিয়া তার মা ঝরনার কোলে ছিল। এ অবস্থাতেই মৃত্যু হয় মা-ছেলের।

নিহতদের স্বজন জাহিদ হাসান শুভ বলেন, আমাদের এক পুলিশ ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানান। আমরা এয়ারপোর্ট থেকে এসে দেখি গাড়ি গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে আছে৷ ভাগনি আর ভাগনি জামাইকে বের করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন : প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডার চালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

শুভ আক্ষেপ করে জানান, ঘটনাস্থলে এসে গাড়িতে কয়েকজনকে জীবিত পেয়েছেন। গার্ডার দ্রুত সরিয়ে হাসপাতালে নিলে হয়তো স্বজনরা বেঁচে যেতেন।

তিনি বলেন, পুরোটাই প্রজেক্টের গাফিলতি। সাড়ে ৩টায় ঘটনা ঘটছে, কোনো লোক আসে নাই। চার ঘণ্টা যাবৎ এভাবে ছিল। আমি এসে দেখেছি আমার ভাগনে জীবিত, বোন জীবিত। শ্বাস নিচ্ছে। আমার বেয়াই যিনি ড্রাইভ করছিলেন, তার হাত কাঁপছে।

এদিকে বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন। মামলায় ক্রেনের চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।
news24bd.tv/আলী