সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

সংগৃহীত ছবি

সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

সামছুজ্জামান শাহীন ও সাইফুর রহমান মিরণ

দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরীতে অবদান রাখছে এ শিল্প। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে তৈরিকৃত জাহাজ বিদেশে রপ্তানি শুরু হলে অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।  

দেশের মাটিতে প্রথম যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করে রূপসা পাড়ের খুলনা শিপইয়ার্ড।

এরপর থেকে এখানে তৈরি হচ্ছে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাহাজ। নানা অব্যবস্থাপনায় এক সময় লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দুটি যুদ্ধ জাহাজ ‘লার্জ প্যাট্রল ক্রাফট’ তৈরির মধ্যে দিয়ে দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। সমুদ্র পথে এই জাহাজে স্বয়ংক্রিয় মিসাইল ও অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসহ একসাথে থাকতে পারেন ৭০ জন নাবিক।

 

দেশের সর্ববৃহৎ ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক এলসিটি তৈরি করে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারীজ সমৃদ্ধ প্রতিটি জাহাজে একই সাথে ৬টি মাঝারি আকারের ট্যাংক পরিবহন করা যাবে। যুদ্ধকালীন সময়ে এই জাহাজ উপকূলীয় এলাকায় স্থল ও নৌপথে অভিযান পরিচালনাও করতে সক্ষম ।  

খুলনা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, এ ধরনের জাহাজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজেদের সফলতা ও সক্ষমতা প্রমাণ করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দক্ষতা অর্জন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।

প্রায় ৬৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীতে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকেই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানান খুলনা শিপইয়ার্ড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।  

এদিকে, কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প আশা জাগাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিকমানের যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ নির্মাণ করে সুদিনের জানান দিচ্ছে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। স্থানীয় বেকারত্ব দুর করতেও ভূমিকা রাখছে এ শিল্পটি। নির্মাণ কাজের সাথে স্থানীয় শ্রমিকরাই জড়িত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং স্বল্প সুদে ঋণ পেলে বরিশালে আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করা সম্ভব বলেও মনে করেন উদ্যোক্তারা।

দেশি-বিদেশি প্রযুক্তির মিশ্রণে এখানে তৈরী হচ্ছে বিশ্বমানের জাহাজ। দেশীয় নৌযানের পর এবার বিদেশে জাহাজ রফতানি করতে যাচ্ছে অ্যাডভেঞ্চার শিপ বিল্ডার্স। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান জানান, ভালোমানের কাজ হওয়ায় ভারতের দুটি জাহাজ নির্মাণের অর্ডার পেয়েছেন তারা। বরিশালে ৫-৭টি জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টন মালবাহী জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে বরিশালে, যা আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলের উপযোগী। এই শিল্পে কাজ করছেন দুই থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক।  

কর্মসংস্থানের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে এই শিল্প। উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস ও কাঁচামালের সুবিধার সঙ্গে সহজ শর্তে ঋণ পেলে প্রতিযোগিতা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে শিল্পটি। আর এই শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা বলছেন, বেকারত্ব দূর করে সাবলম্বী হচ্ছেন তারা।

news24bd.tv/আজিজ