সুন্দরবনে কমছে বাঘ, হত্যায় জড়িত ৩২ প্রভাবশালী

সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

সুন্দরবনে কমছে বাঘ, হত্যায় জড়িত ৩২ প্রভাবশালী

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাঘ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ২৯ জুলাই দিবসটি পালিত হয়। ফলসরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিগত কয়েক দশকে বাড়তে শুরু করেছে বাঘের সংখ্যা। তবে শঙ্কার বিষয় হলো বাংলাদেশে তা ক্রমান্বয়ে কমছে।

২০১৫ সালে সরকারের করা জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল মাত্র ১০৬টি, যা ২০০৪ সালে ছিল ৪৪০টি। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া বাঘশুমারি মে মাসে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ না করায় জানা যাচ্ছে না বর্তমানে বাঘের সংখ্যা।

এদিকে বাঘ হত্যা ও পাচার নিয়ে গবেষণা করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। ২০১৬ সালের জুনে তারা বাঘ হত্যা ও চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঘ হত্যায় মদদ দেওয়া ও চোরাচালানে জড়িত।

এদিকে 'বাঘ বাঁচলে বন বাঁচবে' এই ভাবনাকে সামনে রেখে বাঘ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তৈরি করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান’। প্ল্যান অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের দুটি ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ফসলের কীটনাশক দিয়ে সুন্দরবনের বাঘ মারা হচ্ছে। বাঘ মারতে ফুরাডন নামের কীটনাশক ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরিণ মেরে তাতে ফুরাডন মাখিয়ে বনের মধ্যে টোপ হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। ওই বিষ মাখানো হরিণ খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা যায় বাঘ। ’

এদিকে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও কোনভাবেই বাঘ নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না বাংলাদেশে। চোরা শিকারিদের কবল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না সুন্দরবনের প্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে। আবার নির্বিচারে হরিণ শিকারের কারণে বনে দেখা দিয়েছে বাঘের খাদ্য সংকট। ফলে মাঝে মধ্যেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে মারা পড়ছে বাঘ। গত ১৭ বছরে অন্তত ৩২টি বাঘকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৩ জানুযারি বাগেরহাটে একটি বাঘ হত্যা করা হয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘ না বাঁচলে শুধু বন নয়, ওই এলাকার মানুষও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কারণ বাঘ কমলে বন ধ্বংসের প্রবণতাও বাড়বে। সুন্দরবন না থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিলীন হয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।

আরও পড়ুন:ক্ষুধার জ্বালায় লোকালয়ে ঢুকে প্রাণ হারাল বাঘ

বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮ বছরে ভারত, নেপাল ও রাশিয়ায় বাঘের সংখ্যা বাড়লেও বাংলাদেশে তা কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের আয়তন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে হরিণ ও শূকরের মতো বাঘের খাবার নিশ্চিত করা গেলে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা অসম্ভব নয়।

শিকারিদের কবলে পড়ে বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে কম্বোডিয়া থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চীন ও ভিয়েতনামে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি বাঘ রয়েছে। বাঘ হত্যা ও চোরাচালান বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশেও বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্পর্কিত খবর