শিশুদের জানার পরিধি ও জ্ঞানচর্চাকে সংকুচিত করছে সোশ্যাল মিডিয়া

প্রতীকী ছবি

শিশুদের জানার পরিধি ও জ্ঞানচর্চাকে সংকুচিত করছে সোশ্যাল মিডিয়া

আমাদের আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ফেসবুক ও টুইটারের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ যুগে এই মাধ্যম ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলে না। এর সঠিক ব্যবহারে মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি অপব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে এর প্রতি আসক্তি শিশু থেকে তরুণ সমাজের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে থেকে বাস্তব জীবনকেই হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের সিংহভাগই তাদের নিজেদের হারিয়ে ফেলছে ডিজিটাল ডিভাইসের কুয়াশার ভিড়ে।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেড়াজালে যেন বন্দী এ প্রজন্ম। বিশেষ করে শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যা তাদের পড়াশোনার প্রতি অনীহা, অপ্রয়োজনে সময় অপচয়ের প্রবণতা ও বেড়ে ওঠার জায়গাটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায়ও প্রভাব ফেলছে। শিশুদের জানার পরিধি ও জ্ঞানচর্চাকে সংকোচিত করছে। তাদের মেধা বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই মাধ্যম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত খোদ ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ। তার ভাষ্য, সোশ্যাল মিডিয়া সময় নষ্টের জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিকারে উপকারে আসতে পারে, যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি যদি শুধু এখানে বসে থাকেন আর যা দেখানো হবে, তাই গলাধঃকরণ করেন, তাহলে তো হবে না। ’

এই মাধ্যমের অতি-ব্যবহারকে শুধু যে জাকারবার্গই অনুৎসাহিত করেছেন তা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কোনো কোনো ব্যবহারকারীর মধ্যে হতাশা ও উদ্বিগ্নতা তৈরি করতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এও বলেছেন, এটা তখনই হয় যখন কেউ শুধু স্ক্রলিং করে যায় এবং অন্য কারও সাথে এই প্ল্যাটফর্মে কোনো মিথষ্ক্রিয়া করে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, এই মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে হাজারো তরুণ-তরুণী বিপথগামী হচ্ছেন, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছেন, পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছেন, খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে দিনরাত ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। অতিসম্প্রতি সিএনএন এ বিষয়ে সতর্কতামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কয়েক বছর আগে নামকরা ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। ২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী এ লেখক মন্তব্য করেছিলেন, ‘ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে। ’

তিনি বলেছিলেন, ‘স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও। ’

শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, জ্যাকবসন নিজেও বইয়ের প্রতি আর তেমন মনোযোগ দিতে পারেন না বলে সেই ২০১৭ সালেই জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, তার মনোযোগের একটা বড় অংশও চলে যায় মোবাইল-কম্পিউটারের স্ক্রিনের পেছনে।

একইভাবে সম্প্রতি শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কুফল নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মধ্যে যে একটা সম্পর্ক আছে তার অনেক প্রমাণ পেয়েছেন ব্রিটেনের চিকিৎসক রঙ্গন চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই এটা একটা বড় সমস্যা এবং এক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন থাকা দরকার।