রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই এবার নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে  বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

এতে ঢাকার সাথে পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি ছুটির দিন আজ শুক্রবার শিক্ষার্থীদের সড়কে বিক্ষোভ করতে দেখা না গেলেও, দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। রাজধানীতে চলাচলের বাহন হিসেবে অটোরিকশা ও রিকশায় এখন ভরসা যাত্রীদের।

সেক্ষেত্রেও গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে দূরপাল্লার পরিবহনের কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। সেখান থেকে কোনো বাস ছাড়া হচ্ছে না। এমনকি কোনো বাসও রাজধানীতে প্রবেশ করছে না।
সেখানে কর্তা ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাইলে তাদের সবার মোটামুটি একই বক্তব্য, সড়কে নিরাপত্তা নেই। বাস ভাঙচুর করা হচ্ছে। এই অবস্থায় নিরাপত্তার খাতিরে কোনো বাস ছাড়া হচ্ছে না।
 
অন্যদিকে এসব বাসের মালিক ও শ্রমিকরা পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। মালিকরা বলছেন, ভাঙচুরের কারণে শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। শ্রমিকরা দাবি, মালিকরা বাস নামাতে নিষেধ করেছেন।
 
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাড়ির লাইসেন্স চেক, গাড়ির লেন ঠিক করতে দেখা গেলেও শ্রমিকদের বক্তব্য তারা ভাঙচুর করছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুর করায় নিরাপত্তার কারণে বাসের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাঙচুর বন্ধ হলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ

রাজশাহী: রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। আজ শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহী থেকে কোনও বাস ছাড়েনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাস মালিকেরা। তবে বাসের নিরাপত্তার কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাংচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জেলা মোটর মালিক গ্রুপ। শুক্রবার সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণসহ আন্তঃজেলার সকল সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খশুভ্র রায় জানান, নিরাপত্তার কারণে তারা শুক্রবার ভোর থেকে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে কোনও সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবত থাকবে। এদিকে রাতে হঠাৎ পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই তাদের মধ্যে। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।

সিরাজগঞ্জ: যানবাহন ভাংচুরের প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক-শ্রমিক সংগঠন। আজ সকালে এ ধর্মঘট শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম লিটন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের যানবাহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কেউ রাস্তায় গাড়ি বের করবে না। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী জানান, দেশব্যাপী ছাত্র-আন্দোলনের নামে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১৫টি ট্রাক, পাঁচটি বাস, তিনটি সিএনজি অটোরিকশা ও দুইটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চালানো থেকে বিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ: নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আজও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। একই কারণে গতকাল দিনে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখে জেলা মোটর মালিক সমিতি। অবশ্য রাতে ঢাকামুখী বাস চলাচল করেছে। গেল বুধবার রাতে জেলা মোটর মালিক সমিতির এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে বাস চলাচল বন্ধ রেখে রাতে চলাচল করছে। শুক্রবার সকালে শহরের মাসকান্দায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী কোনও বাস ছাড়েনি। সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থেকে দূর পাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দাবি নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনও রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বাস ও চালকদের নিরপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘরস্থ পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অভিমুখে কোনও বাস ছেড়ে যায়নি।

মেহেরপুর: নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ঢাকায় পরিবহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে ধর্মঘটে বসেছেন মেহেরপুরের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা। শুক্রবার সকাল থেকে তারা ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিবহন ভাংচুর করেছে। এতে শ্রমিক ও মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এজন্য ফেডারেশনের নির্দেশে মেহেরপুরে থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তারা। মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, বর্তমানে সড়কে মালিক ও শ্রমিকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। ঢাকায় আন্দোলনকারীরা ইচ্ছেমতো পরিবহন ভাংচুর ও তাতে আগুন দিচ্ছে। এর প্রতিবাদে ফেডারেশনের নির্দেশে শুক্রবার সকাল থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্ষন্ত এই ধর্মঘট চলবে।

জয়পুরহাট: ঢাকায় পরিবহন ভাংচুরের প্রতিবাদে জয়পুরহাটে আজ শুক্রবার সকাল থেকে মালিক-শ্রমিকদের ডাকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, ঢাকায় বিভিন্ন পরিবহনে ভাংচুর করছে শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে জয়পুরহাট থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন  করছে তারা। এদিকে, কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

পটুয়াখালী: সড়কের যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে পটুয়াখালীতে বাস ধর্মঘট চলছে। কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আজ শুক্রবার সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পটুয়াখালী বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি। আকস্মিক এ বাস ধর্মঘটের ফলে বিপাকে পড়েছে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকসহ সাধারণ মানুষজন। পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জানান, গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলে যেভাবে বাধা দিচ্ছে এবং গাড়ি ভাংচুর করছে তাতে সড়কে বাস চলাচল করা সম্ভব নয়। এ কারণে শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সড়কে শিক্ষার্থীদের চলমান এ আন্দোলন শেষ হলে আবারও বাস চলচল শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

নোয়াখালী: সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাত থেকে পরিবহন ও পরিবহন শ্রমিকদের রক্ষার অজুহাতে নোয়াখালীতে দূর পাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সকল পরিবহন চলাচল বন্ধ করে রেখেছে জেলা মালিক সমিতি ও পরিবহন সমিতি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। শুক্রবার সকালে জেলা শহরের সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড ও চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড থেকে থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ কোনও পরিবহন ছেড়ে যায়নি। ফলে বন্ধ রয়েছে নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-চট্টগ্রাম, নোয়াখালী-ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবহন। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রামমুখী যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। একদিকে বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকা অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ  আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ফেনী: ফেনী থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা। শুক্রবার ভোর থেকে এ দুই রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফেনী আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজম চৌধুরী জানান, বাস চালকেরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে চাইছেন না। যাত্রীরাও নিরাপদবোধ করছেন না। এজন্য ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। স্টার লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাফর উদ্দিন জানান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গাড়ি ভাংচুরের কারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের আলোকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা।

ফরিদপুর: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো ফরিদপুর থেকে ঢাকার পথে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে মাঝে মধ্যে দু-একটি বাস ঢাকামুখী ছেড়ে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার  ফরিদপুর পৌরবাস  টার্মিনালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বিকল্প পথে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। কাউকে আবার বাস ছাড়ার আশায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর