ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক

ব্রিটেনের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস সর্বপ্রথম আলোচনায়ে এসেছিলেন ব্রিটেনে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হোক এই দাবির জন্য। সে সময়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন। এবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সেই আন্দোলনে যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভকারীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাকে 'গভীরভাবে উদ্বেগজনক' বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তচিন্তার পক্ষে আন্দোলনকারীরা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের পুলিশ দু'জনকে গ্রেপ্তার করে। অক্সফোর্ডেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু তারপর আবার তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছিল রানির মৃত্যুর পরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং রাজা তৃতীয় চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ঘোষণার সময়।

তবে লন্ডন পুলিশ বলছে, জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে।

গত রোববার এডিনবরার সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে যখন রাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আসীন বলে ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন সেখানে ২২ বছর বয়সী এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে শান্তি ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়। সেই নারী রাজতন্ত্রবিরোধী বলে খবর প্রকাশ হয় একাধিক গণমাধ্যমে। তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও এডিনবরার শেরিফ কোর্টে পরের কোন এক তারিখে তাকে হাজিরা দিতে হবে বলেও জানানো হয়।

একইদিনে অক্সফোর্ডে সাইমন হিল নামে ৪৫ বছরের এক ব্যক্তিকেও জন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। অক্সফোর্ডে যখন রাজার সিংহাসনে আরোহণের ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এই বলে চিৎকার করেছিলেন যে, 'তাকে কে নির্বাচিত করেছে?' এ বিষয়ে টেমস ভ্যালি পুলিশ বলেছে, পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এবং তিনি পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে 'স্বেচ্ছায়' সহযোগিতা করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোমবার এডিনবরার রয়্যাল মাইলে ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় শান্তি ভঙ্গের অভিযোগে। ঐ রাস্তা দিয়ে যখন রানির কফিন নিয়ে রাজকীয় শোক মিছিল যাচ্ছিল, তখন রানির দ্বিতীয় ছেলে প্রিন্স এন্ড্রুকে তিনি হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

দেশটির বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। এদেশের মানুষ মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা ভোগ করে, এসব অনুষ্ঠানকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে যেন তা ক্ষুণ্ণ করা না হয়, সেটার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মানুষ যাতে শোক প্রকাশ করতে পারে, শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে, তাতে সহায়তা করা যেমন পুলিশের কর্তব্য, তেমনি মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার রক্ষাও পুলিশের দায়িত্ব।

অন্যদিকে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আঙ্গুল তুলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পুলিশ তাদের ব্যাপক ক্ষমতা ব্যবহার করে যেরকম কঠোর এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা বেশ উদ্বেগজনক। প্রতিবাদের বিষয়টি রাষ্ট্রের তরফ থেকে দেয়া কোন উপহার নয়, এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।

সোমবারও রাজা তৃতীয় চার্লসের ওয়েস্টমিনিস্টার হলে আসার আগে এক ব্যক্তি 'নট মাই কিং', অর্থাৎ 'আমার রাজা নন' বলে একটা প্ল্যাকার্ড হাতে পার্লামেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

লন্ডনের পুলিশ জানিয়েছে, শ্লোগান দেয়া ব্যক্তিকে ওয়েস্টমিনস্টার হলের বাইরে থেকে সরে যেতে বলা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বা তাকে পার্লামেন্টের আশে-পাশের এলাকাও ত্যাগ করতে বলা হয়নি। পার্লামেন্ট ভবনে গাড়ি চলাচল এবং গেট দিয়ে যাতায়াতে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সেজন্যে এটা করা হয়েছিল।

এক বিবৃতিতে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, জনগণের অবশ্যই প্রতিবাদ করার অধিকার আছে এবং এখন যে অসাধারণ পুলিশ অপারেশন চলছে, তাতে জড়িত সব পুলিশ অফিসারকে আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছি। লন্ডনে আগামী এক সপ্তাহে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নামবে তা সামলাতে পুলিশ এবং বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার সামরিক সদস্যও কাজ করবে।

news24bd.tv/FA