আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধে ১০০ সেনা নিহত

সংগৃহীত ছবি

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধে ১০০ সেনা নিহত

অনলাইন ডেস্ক

আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিরোধপূর্ণ নাগোরনো–কারাবাখ অঞ্চল। এখানে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সেনাদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার তুমুল লড়াই হয়েছে। রাতভর হওয়া এই যুদ্ধে উভয়পক্ষের প্রায় ১০০ সেনা নিহত হয়েছেন। নিহত সেনাদের ৪৯ জন আর্মেনিয়ার এবং ৫০ জন আজারবাইজানের।

এর আগে সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিকভাবে আর্মেনিয়ার অর্ধশত সেনা নিহত হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। সময় গড়ানোর সাথে সাথে আজারবাইজানের সেনা নিহতের তথ্যও সামনে এসেছে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, সোমবার রাতভর ওই যুদ্ধে তাদের ৪৯ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই সংঘর্ষে তাদেরও ৫০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।

প্রতিবেশী এই দেশ দু’টি একে অপরের সঙ্গে দু’টি যুদ্ধ করেছে এবং তিন দশক ধরে নিয়মিত ছোট ছোট সংঘর্ষ চালিয়ে এসেছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার রাশিয়া বলেছে, সর্বশেষ সংঘর্ষ বন্ধের জন্য তারা যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করেছে।

আর্মেনিয়া প্রাথমিকভাবে বলেছিল, যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরিবর্তে শান্ত অবস্থায় রয়েছে। পরে আজারবাইজান জানায়, তারা প্রতিবেশী দেশটির ‘উস্কানি’র কারণে তার উদ্দেশ্যগুলো সম্পন্ন করেছে।

নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত একটি ভূখণ্ড, তবে এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। আজারবাইজানের অভিযোগ, নাগোরনো-কারাবাখসহ আশপাশের বিশাল আজারবাইজানি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া। এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৯১ ও ২০২০ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ায় দুই দেশ।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সীমান্ত সংঘাত থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মানুষ। ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ের পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় চুক্তির মাধ্যমে নিজ ভূখণ্ড উদ্ধার করে আজারবাইজান। তবে চুক্তিতে নাগোরনো-কারাবাখের ‘স্ট্যাটাস’ অনিষ্পন্ন ছিল। মস্কো সেখানে ২ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নেয় মস্কো।

দুটি দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে বড় আকারে যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালেও দুই দেশ ছয় সপ্তাহ ধরে এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।

বিবিসি বলছে, সর্বশেষ লড়াইয়ের জন্য দুই দেশ পরস্পরকে দোষারোপ করছে। আর্মেনিয়া দাবি করছে, সীমান্ত এলাকায় তাদের কয়েকটি শহরে আজারবাইজান গোলা বর্ষণ করেছে এবং তারা এই উস্কানির পাল্টা জবাব দিয়েছে।

অন্যদিকে আজারবাইজান বলেছে, তাদের অবকাঠামো প্রথমে হামলার শিকার হয়। তাদের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, গত মাস ধরে আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীর তৎপরতা দেখে বোঝা যাচ্ছিল তারা একটি বড় আকারের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া এই অঞ্চলের একটি প্রধান শক্তি এবং উভয় পক্ষের সাথেই দেশটি সম্পর্ক বজায় রাখে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ব্যক্তিগতভাবে’ মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখছেন।

তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট স্বাভাবিকভাবেই সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে তুরস্কের সঙ্গে আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং আপাতদৃষ্টিতে আঙ্কারা আজারবাইজানকে সমর্থন করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, আর্মেনিয়ার উচিত তার উস্কানি বন্ধ করা এবং শান্তি আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া।

সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যেকোন সামরিক লড়াই দ্রুত বন্ধ করতে হবে। সামরিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নাগোরনো–কারাবাখের বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না। ’

এদিকে চলমান লড়াই নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যেকোন ধরনের ভূমিকা পালনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল।

news24bd.tv/আলী