ইসরায়েলে তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস দিয়ে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরো অনেকের ওপর গোপন নজরদারি খবর প্রকাশিত হলে গতবছর সারাবিশ্বে তোলাপাড় শুরু হয়। বিশ্বের ১৭টি প্রথম সারির মিডিয়া, সাংবাদিকতা বিষয়ক প্যারিস-ভিত্তি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ফরবিডেন স্টোরিজ‘ এবং সেইসাথে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে দেখানে হয় কিভাবে এই স্পাইওয়্যার মানুষের গোপণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছিলো এবং গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের ফোনে আড়িপাতছিলো। বিশ্বের প্রায় যে প্রায় ৫০টি দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি মোবাইল ফোনে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও‘র তৈরি পেগাসাস নামের সফটওয়ারটি ঢুকিয়ে নজরদারির প্রমাণ পাওয়া যায় অনুসন্ধানে। ২০১০ সালে এ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কি :
পেগাসাস হলো এমন একটি স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার যেটি যে কোনো মোবাইলে অনুপ্রবেশ করে সেই মোবাইলের ব্যক্তিগত অবস্থান, মোবাইলের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নেয়াসহ সব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এক কথায় বলা যায়, যার ফোনে এই স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল করা হয় তার ফোনের সব তথ্য আর নিরাপদ থাকে না।
কিভাবে ‘পেগাসাস’ স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নেয়
মোবাইলে ফোনের খুদে বার্তা ও কলের মাধ্যমে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এই স্পাইওয়্যার। এর মাধ্যমে স্মার্টফোনে স্পাইওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়।
এটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, একবার স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল হয়ে গেলে সহজেই যে কারও হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজিং ও কথা বলা, ভয়েস কল, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট তালিকা, বিভিন্ন ইভেন্টের ক্যালেন্ডার, ফোনের মাইক্রোফোন এমনকি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ ও তাদের হাতে চলে যায়। ভিক্টিমের মোবাইলের ব্যবহৃত ক্যামেরা দিয়েও যেকোনও সময় ছবি ও ভিডিও ধারণের ক্ষমতা রাখে স্পাইওয়্যারটি। এছাড়া যেকোনও মুহূর্তে মোবাইল লোকেশন চালু করে স্পাইওয়্যার দেখতে পারবে ভিক্টিম এখন কোথায় আছেন।
এদিকে, আমরা অনেকেই আছি যারা আমাদের মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো এনক্রিপ্ট করে রাখি। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় হলো এই স্পাইওয়্যারটি এনক্রিপ্ট করা ফাইলও পড়তে পারে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গার্নিয়েরি গার্ডিয়ানকে বলেন, একবার কোনো ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস সফটওয়্যার ঢুকে গেলে এনএসওর গ্রাহক পুরো ফোনটির দখল পেয়ে যায়।
‘ফোনের মালিকের মেসেজ, কল, ছবি, ই-মেইল সবই দেখতে পাবে, গোপনে ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোন চালু করতে পারবে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপের বার্তাগুলোও পড়তে পারবে’ বলেন তিনি।
মোবাইল ফোনকে সুরক্ষিত রাখার কিছু পরামর্শ
নিজের ব্যক্তিগত তথ্য গোপণ রাখতে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ফোনে অপরিচিত কোন ওয়েবসাইটের লিংক আসলে তাতে প্রবেশ করবেন না। ফোন যেন অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের লক চালু করে রাখুন। ফোনের নির্ধারিত ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনও ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপস আপডেট করবেন না। থার্ড পার্টি যেসব অ্যাপস আছে সেসব ফোনে ভুলেও ইনস্টল করবেন না। আপনার ফোনের ব্যবহৃত অ্যাপসগুলো আপনার কি কি তথ্য নিচ্ছে সেগুলো চেক করুন। অপ্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অখ্যাত কোনও পোর্টালের লিংকে ক্লিক করবেন না।
সুত্র : দ্যা গার্ডিয়ান , বিবিসি ও টেকক্রাঞ্চ এবং অ্যান্ড্রয়েড অথরিটি
news24bd.tv/আলী