এক নজরে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এক নজরে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

আতাউর রহমান কাবুল

সিঙ্গাপুর, কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে চালু থাকলেও বাংলাদেশে এতোদিন ছিলো না সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি। সম্প্রতি উদ্বোধন হলো সেরকম সুবিধা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।  বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ানে নির্মিত এই হাসপাতালটির মাধ্যমে বিভাগভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে বাংলাদেশ পদার্পণ করলো সেন্টার বেজড চিকিৎসা সেবায়। এখানে একই ছাদের নিচে রোগীরা পাবেন পরীক্ষা-নিরিক্ষাসহ সব ধরণের চিকিৎসা সেবা; রোগীকে অন্য কোথাও যেতে হবে না।

 

মানুষের জানার ব্যাপক আগ্রহ, কী কী বিশেষ সুবিধা থাকছে এই হাসপাতালটিতে। এক নজরে তা তুলে ধরা হলো :  

থাকছে উন্নত প্রযুক্তি
এখানে থাকছে মেগা হসপিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমের (এইচআইএস) আওতায় অন্তর্ভূক্ত কাটিং এজ ইনফরমেশন সিস্টেম, মাল্টিডিসিপ্লিনারি এবং স্পেশালাইজড হেলথ কেয়ার সার্ভিস। এগুলো হলো Picture Archiving and Communication system (PACS), Order Communication system (OCS), Advanced EMR-Electronic Medical Record, App based interactive platform integrated appointment management (App Based) সুবিধাসহ নানাবিধ প্রযুক্তিগত সুবিধা। এই অটোমেটেড হসপিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমের আওতায় রোগীদেরকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা পাবেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের আউটডোর বা বহিবির্ভাগ থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। ’ চিকিৎসা ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ থেকে কিছু বেশি খরচ হলেও চিকিৎসা খরচ জনগণের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এখানে গরীব ও ধনী সব ধরণের লোকের জন্য চিকিৎসা সেবা থাকবে। ’

৫টি স্পেশালাইজড সেন্টার
এটি মূলত সেন্টার বেজড হাসপাতাল যাতে ৫টি অত্যাধুনিক সেন্টার থাকবে। এক সেন্টারেই মিলবে সংশ্লিষ্ট রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা। অন্য কোথাও যেতে হবে না। এগুলো হলো :

ইমার্জেন্সি মেডিকেল সেন্টার : এখানে মিলবে দুর্ঘটনাজনিত এবং জরুরি চিকিৎসা।

কার্ডিও এবং সেরিব্রোভাসকুলার সেন্টার : এখানে হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগীদের সার্জারিসহ সব ধরণের চিকিৎসা থাকবে।  

হেপাটোবিলিয়ারি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার : এখানে হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট (যকৃৎ প্রতিস্থাপন) প্রভৃতি সমন্বিত চিকিৎসা থাকবে।

কিডনি ডিজিজ সেন্টার : হেমোডায়ালাইসিস, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ কিডনি রোগীদের সব ধরণের চিকিৎসার সুযোগ থাকবে।

চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার : শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা মিলবে এখানে।

এছাড়াও থাকবে চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ, জিন থেরাপি, রোবটিক সার্জারির মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ওয়ার্ড ও কেবিন
৬ ভিভিআইপি এবং ২২টি ভিআইপি কেবিন এবং ২৫টি ডিলাক্স কেবিন থাকবে। এছাড়াও থাকবে জেনারেল ওয়ার্ড, সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এসআইসিইউ), নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ), পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ), ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং মেডিকেল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এমআইসিইউ)।  

পরীক্ষা
অত্যাধুনিক সিটিস্ক্যান, এমআরআই থেকে শুরু করে সব ধরণের প্যাথলজি ও ইমেজিং পরীক্ষার সুযোগ থাকছে এখানে।

চিকিৎসক ও নার্স 
হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ প্রায় মোট ৬১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। তাদের মধ্যে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ জন নার্স, ১০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনের ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৮ জন চিকিৎসকসহ মোট ৫৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে দেশে এনে ৪৮০ জনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।  

অন্যান্য সুবিধা
এই স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেবা নিতে এসে গ্রাহককে অন্য কোন জায়গায় যেতে হবে না। কারণ হাসপাতালের ভেতরেই থাকবে একটি কনভেনিয়েন্স শপ, ব্যাংকিং সুবিধা, ফার্মেসি, ৩৫০ সিট বিশিষ্ট উন্নত কিচেন যার আওতায় ৩টি ক্যাফেটেরিয়া থাকবে, ৯০ সিট বিশিষ্ট ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া, উন্নত লন্ড্রী হাউজ সহ কার পার্কিংয়ের বিশাল সুবিধা। এখানে ১টি ভিভিআইপি এলিভেটর সহ ১৬টি এলিভেটর ও ১টি এসক্যালেটর, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনা, হিটিং, ভেনটিলেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

এখনই চালু হচ্ছে না

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হলেও এখনই চালু হচ্ছে না এটি। ইতিমধ্যে যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬০ ভাগের মতো। এখনও অনেক যন্ত্রপাতি পোর্টে ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোসহ সব কাজ সম্পন্ন হলে আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে।

news24bd.tv/desk