‌‘মার্চের মধ্যেই বন্ধ হচ্ছে বিবিসি বাংলা রেডিও’

বিশেষ সাক্ষাৎকার

‌‘মার্চের মধ্যেই বন্ধ হচ্ছে বিবিসি বাংলা রেডিও’

অনলাইন ডেস্ক

বাংলায় রেডিও সম্প্রচার বন্ধের পরিকল্পনা করেছে বিবিসি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আরবি, ফারসি, চিনা, উর্দু সহ আরো নয়টি ভাষার রেডিও বন্ধের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বাংলা সহ কয়েকটি ভাষার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট দেশে পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত এসব পদক্ষেপের ফলে বিবিসির প্রায় ৪০০ সাংবাদিক চাকরি হারাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তাফা বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

প্রশ্ন : এতো বড় পরিকল্পনা, এতো লোকের কাটছাট বা ছাঁটাই করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে হঠাৎ কী কারণে?

সাবির মুস্তাফা: বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের রেডিও এবং টেলিভিশন-এই দুটি মাধ্যম থেকে সরে এসে ডিজিটাল কার্যক্রমের দিকে নজর দিচ্ছে বেশি। গত কয়েক বছরে বিবিসির যত বিনিয়োগ হয়েছে বিশেষ করে ঢাকার যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার সবই হয়েছে ডিজিটালে।

কিন্তু এখন গোটা বিবিসির ওপর প্রচণ্ড আর্থিক চাপ চলে এসেছে।

বিভিন্ন কারণে চলতি বছরেই বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে প্রায় তিন কোটি পাউন্ড সাশ্রয় করতে হবে যা বিশাল একটা অংক। এটা করতে গেলে অনেক কর্মী ছাটাই করার প্রয়োজন হয়ে গেছে আর কি। আপনারা বলতে পারেন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এই ধাক্কায় এই চাপকে একটা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। এই ধাক্কায় তারা কর্মী ছাটাই করে অর্থ সাশ্রয় করার পাশাপাশি রেডিও এবং টেলিভিশনকে আরো বেশি ডিজিটালের দিকে নিয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে মূলত উদ্দেশ্য যে, এই আর্থিক চাপকে ব্যবহার করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে ঢেলে একেবারে নতুন করে সাজানো হবে। এখানে ডিজিটাল হবে প্রধান মাধ্যম।

প্রশ্ন : একসাথে এতগুলো ভাষার রেডিও বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো সার্ভিস বন্ধ করা হচ্ছে না তো?

সাবির মুস্তাফা: না, কোনো ভাষার বিভাগ বন্ধ করা হয়নি। তবে ৪১টি যে ভাষা বিভাগ আছে তার সবকিছুই যে অক্ষত থাকবে বিষয়টা এমনও নয়। অনেক কিছুই বন্ধ করা হচ্ছে, অনেক লোকের চাকরি চলে যাবে। কিন্তু প্রতিটি ভাষায় সম্প্রচার কীভাবে থাকবে সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে দেখবেন যে, গত ৮১ বছর ধরে বাংলা বিভাগ চালু থাকলেও বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমরা খেয়াল করছি, বিশেষ করে বাংলাদেশে আমাদের শ্রোতা কমছে। বিভিন্ন জরিপে আমরা দেখতে পাই, শ্রোতার সংখ্যা শুধু কমছেই, এটা বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। এই জিনিসটা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস উপলব্ধি করছে ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বাংলা ভাষাভাষী আছে সেখানে ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে তারা সংবাদ পাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাচ্ছে, অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ইউজ করছে। কাজেই রেডিওর জায়গা আর সেই স্থানে নেই। এজন্যই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেডিওকে বন্ধ করতে হবে এবং রেডিওর যা কার্যক্রম তা ডিজিটাল মাধ্যমে দিতে হবে।

প্রশ্ন : অনেকে সন্দেহ করছে যে, বিবিসি বাংলা রেডিও বন্ধের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা? অনেকে এমনও সন্দেহ করছেন যে বাংলাদেশ সরকারের চাপে বিবিসিকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কিনা।

সাবির মুস্তাফা : এটা দুঃখের বিষয়। আমি জানি না এটা কেন হয় কিন্তু এটা প্রায়ই দেখি বাংলাদেশের কিছু মানুষ সবকিছুর পেছনে একটা ষড়যন্ত্র খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু না, এটাতে কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো চাপ বা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই।
দেখেন, আরবি ভাষার রেডিও বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ আরবি হচ্ছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সবচেয়ে পুরনো রেডিও সম্প্রচার যারা একটা বিশাল অঞ্চলকে সার্ভ করে।

তবে বাংলা রেডিও সার্ভিস সম্প্রচার বন্ধের কথা বেশ কয়েক বছর ধরে চলছিল। কিন্তু আমি এটাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের মনে হয়েছিল হয়তো এটার একটা চাহিদা থাকবে। কিন্তু এই আর্থিক চাপের কারণেই একটা সাংঘাতিক সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হয়েছে। যেহেতু বাংলা সার্ভিসের শ্রোতা কমছে সেহেতু এটা ডিজিটাল ভার্সনে গেলে সবচেয়ে বেশি কাজ হবে। মূলত সে কারণেই এটা করা হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ সরকার বা অন্য কোনো চাপের কারণে বন্ধ করা হচ্ছে না।

প্রশ্ন : তাহলে আর কতদিন পর্যন্ত চলবে বিবিসি বাংলা রেডিও?

সাবির মুস্তাফা : না, এখনো আমরা সেরকম সময়সূচি পাইনি যে এটা কবে নাগাদ বন্ধ করা হবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এটা হবে। আর ৬ মাস। তবে এটা জানুয়ারিতে হবে না ফেব্রুয়ারিতে হবে সেটা বলতে পারবো না তবে মার্চের পর বিবিসির বাংলা রেডিও বলতে আর কিছু থাকবে না।

শ্রুতিলিখন : আতাউর রহমান কাবুল