আজও করতোয়া তীরে ছোট্ট মেয়েটাকে খুঁজতে গিয়েছিলেন বাবা ধীরেন

ফাইল ছবি

আজও করতোয়া তীরে ছোট্ট মেয়েটাকে খুঁজতে গিয়েছিলেন বাবা ধীরেন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

মা, বোন আর দুই মেয়েকে হারিয়ে পাথরের মতো অসাড় হয়ে গেছেন আলোরানী। মেয়ের মরদেহ খুঁজতে আজও করতোয়ার পাড়ে গিয়েছেন তাদের বাবা ধীরেন রায়। সঙ্গে ছিলো নিহত জ্যোতি (২) ও জয়া রানীর (৪) বড় ভাই শান্ত।

ধীরেনের দুই মেয়ে নৌকাডুবিতে মারা গেছে।

নৌকাডুবির ২ দিন পর ছোট মেয়ে জ্যোতি রানীর মরদেহ খুঁজে পান তিনি। কিন্তু এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বড় মেয়ে জয়া রানীর মরদেহ। দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে তাদের পরিবার।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাঁটিয়ার পাড়া গ্রামের এই পরিবার এখন নিথর হয়ে পড়েছে।

গ্রামের প্রতিবেশীরাও এ ঘটনায় নিস্তব্ধ। আলোরানী জানান, জয়া রানীকে আগামী বছর জানুয়ারি মাসে স্কুলে ভর্তি করার কথা ছিলো। তাই আমার জন্ম নিবন্ধনের কাগজ পত্র আনার জন্য মাড়েয়ার ফুটকিবাড়িতে মায়ের বাড়ি যাই। গরীবের সংসার। সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকি। মায়ের বাড়ি যেতে পারি না। বছরে এক দুবার যাই। এবার যেদিন যাই তার পরদিন মহালয়া। সবাই বলল অনেক দিন পর এসেছিস বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার পূজা দিয়ে যা। আমিও ভাবলাম মেয়েকে প্রথম স্কুলে ভর্তি করাবো। মন্দিরে গিয়ে বলে আসি। সবাই মিলে গেলাম। ঘাটে নৌকায় উঠলাম। আমরা প্রথমে উঠেছি। তখন এতো ভিড় ছিলো না। পরে অনেক মানুষ চাপাচাপি করতে লাগলো। আমার জ্যোতি তখন আমার কোলে। জয়া পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো নানী আর খালার সাথে। আমার বোন জয়ার হাত ধরেছিল।

আক্ষেপ করে আলোরানী বলেন, কখন যে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। নৌকাটা উল্টে যাবার সাথে সাথে মানুষের চাপে জ্যোতি ছিটকে পড়ে গেলো। জ্যোতি কোথায় জানি না। সবাই আমাকে ধরে পানির নিচে টানতে লাগলো। আমি সাঁতার জানতাম। সাঁতার কাটছি আর জয়া জ্যোতিকে খুঁজছি। কোনোমতে ভেসে ভেসে অনেক দূর এসে দেখি কে যেন আমাকে উপরে তুলে এনেছে। পরে জানলাম আমার মেয়ে দুটো নাই। তারপর শুনলাম আমার মাও ডুবে গেছে, আমার ছোট বোনও মারা গেছে। আমার পরিবারের ৫ জন মারা গেছে। আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মহালয়া পূজা উপলক্ষে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য নৌকা বেয়ে করতোয় নদী পার হওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে একই ঘটনায় আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। তবে নৌ দুর্ঘটনার ৮ম দিনেও নিখোঁজ স্বজনরা মরদেহ পাওয়ার আশায় এখনও করতোয়া নদীর ঘাট এলাকায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে। আজ রোববার (২ অক্টোবর) রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি। সোমবার জানা যাবে এই নৌকাডুবির প্রকৃত কারণ।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক