পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু নিয়ে ইরানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে চলমান এ বিক্ষোভকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। এ অভিযোগের তীর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক নারীর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। বিক্ষোভ ইস্যু নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, ‘ইরানের চিরশত্রু এবং তাদের মিত্রদের বুদ্ধিতে এই ‘দাঙ্গা’ হয়েছে। ’
সোমবার (৪ অক্টোবর) পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডেটদের একটি গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমিনির মৃত্যু আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।
‘বিদেশী শক্তিগুলো দাঙ্গার পরিকল্পনা করেছিল কারণ তারা ইরানের সকল ক্ষেত্রে শক্তি অর্জন সহ্য করতে পারে না। আমি স্পষ্টভাবে বলছি আমেরিকা ও দখলদার মিথ্যা ইহুদিবাদী শাসক (ইসরায়েল) এই দাঙ্গার পেছনে রয়েছে। তাদের অর্থপ্রদানকারী এজেন্ট ও বিদেশে থাকা কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানিদের সহায়তায় এটি তৈরি হয়েছিল,’ যোগ করেন খামেনি।
নিরাপত্তা বাহিনীকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্থিরতার সময় তাদের সঙ্গে অবিচার হয়েছিল। ’
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখে পড়েছে খামেনি ও তার সরকার। বিক্ষোভ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হিংসাত্মক দমন-পীড়ন তীব্রতর করার সম্পর্কে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা ইরানি নারীদের পাশে রয়েছি যারা তাদের সাহসিকতা দিয়ে বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে। ’
এ দিকে সোমবার বিক্ষোভ ইস্যুতে লন্ডনে নিযুক্ত ইরানি দূতকে তলব করেছে লিজ ট্রাস প্রশাসন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর হিজাব ইস্যুতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে আটক করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। এরপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আমিনি। তিনদিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপরেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয়।
শুরুতে ইরানের কুর্দি-জনবহুল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এ বিক্ষোভ কেন্দ্রীভূত ছিল। পরে এটি খুব দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের অন্তত ৫০টি শহরে এখনো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। এরপর এত বড় বিক্ষোভ আর হয়নি দেশটিতে।
মৃতের সংখ্যা
রোববার নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আইএইচআর জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ জন বিক্ষোভকারী শুক্রবার জাহেদানে সংঘর্ষে মারা গেছে।
অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ইরানে বিক্ষোভে ৪০ জন মারা গেছে। যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছে।
news24bd.tv/মামুন