আটলান্টিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ ভাসালো যুক্তরাষ্ট্র 

সংগৃহীত ছবি

আটলান্টিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ ভাসালো যুক্তরাষ্ট্র 

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে সঙ্ঘাতের আবহে ভার্জিনিয়ার নৌঘাঁটি থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে যাত্রা শুরু করছে এটি। এই যুদ্ধজাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো 'স্ট্রাইক কোরের' অংশ হিসাবে কাজ করবে। তবে এই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ঘটনা 'তাৎপর্যপূর্ণ' বলে মনে ‌করছে সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের নামে নামাঙ্কিত এই যুদ্ধজাহাজটি ১৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।   

কেন এটি সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ? ৩৩৭ মিটার দীর্ঘ এবং এক লক্ষ টন ওজনের এই যুদ্ধজাহাজে ৭৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবাহী রণতরীটির ফ্লাইট ডেকের প্রস্থ প্রায় ৭৮ মিটার। তাতে রয়েছে দু’টি রানওয়ে।

২০০৫ সালের অগস্ট এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা এবং নকশা তৈরি শুরু হয়। নিউপোর্ট নিউজ শিপবিল্ডিং কোম্পানিকে দেওয়া হয় ফোর্ড গোত্রের প্রথম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ। ২০০৯-এর গোড়ায় শুরু হওয়ার পরে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড নির্মাণের কাজ। ২০১৩-র অক্টোবরে প্রথম জলে ভাসে বিশালাকৃতির এই যুদ্ধজাহাজ।

দীর্ঘ 'সি ট্রায়াল' পর্বের পরে ২০১৫ সালে ফোর্ডে অস্ত্রসম্ভার বসানোর কাজ শেষ হয়। ২০১৭ এর অক্টোবরে এই যুদ্ধজাহাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পঞ্চাশের দশকে তৈরি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিল। ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডকে সেই 'শূন্যস্থান' পূরণে কাজে লাগানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় নৌবহরের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ড্যান ডোয়ার জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভূমিকা বদলেছে ফোর্ডের। ন্যাটোর জোটের নৌবাহিনী 'ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপে' আটলান্টিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাবে এই যুদ্ধজাহাজ।

সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বড় সুবিধা হলো দু’টি পরমাণু চুল্লিবিশিষ্ট এই যুদ্ধজাহাজ বেশ কয়েক বছর টানা সমুদ্রে থাকতে পারে। ওই সময়ের মধ্যে জ্বালানির জন্য কোনও বন্দরে ভিড়তে হবে না ফোর্ডকে। এক লক্ষ টন ওজন নিয়েও ঘণ্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল (৫৬ কিলোমিটার) গতিবেগে ছুটতে পারে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। এতে থাকতে পারেন ৯,০০০-এরও বেশি নৌসেনা এবং অন্যান্য কর্মী।

বিমানবিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র, সি স্প্যারো ক্ষেপণাস্ত্র, ফ্যালন্যাক্স 'ক্লোজ ওয়েপন সিস্টেম' সমৃদ্ধ এই ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা অন্য বিমানবাহী রণতরীর তুলনায় সুদৃঢ় বলেই মনে করেন নৌ-প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই যুদ্ধজাহাজে ন্যাটোভুক্ত দেশ কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের নৌসেনারা ঠাঁই পাবেন। তবে আটলান্টিকে মোতায়েন ন্যাটো বহরের আর এক অংশীদার ব্রিটেনের কোনও নৌসেনা আপাতত মার্কিন বিমানবাহী রণতরীটিতে থাকবেন না। মূলত, আটলান্টিক মহাসাগরে ন্যাটোর 'ভাসমান দুর্গের' ভূমিকা পালন করবে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড।

ফোর্ড গোত্রের আরেক এক বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জন এফ কেনেডি নির্মাণের কাজও ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। চলছে সমুদ্রে পরীক্ষার পালা। এই গোত্রের ডরিস মিলার, এন্টারপ্রাইজ-সহ মোট পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য আওয়ার এশিয়ান টাইমস

news24bd.tv/রিমু