জাহাঙ্গীরের বাড়িতে শোকের মাতম, নির্বাক বাবা-মা

মধ্য আফ্রিকায় নিহত 

জাহাঙ্গীরের বাড়িতে শোকের মাতম, নির্বাক বাবা-মা

নূর আলম, নীলফামারী

মধ্য আফ্রিকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বাবা-মা। থামানো যাচ্ছে না স্ত্রী শিমু আকতারের কান্না।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের ডিমলা উপজেলার ডিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের বাড়িতে।

পরিবারকে সমবেদনা জানাতে স্থানীয় মানুষ ভীড় করছেন মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকেই। বুধবার সকালে সমবেদনা জানাতে বাড়ি যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।

শোকে মুহ্যমান হয়ে নির্বাক মা গুলেনাহার বেগম আর বাবা লতিফর রহমান। মুখ থেকে বের হচ্ছে না যেন কোনো কথা।

ছেলের মুত্যুর খবরে অসুস্থ্য হয়ে পড়া শয্যাশায়ী মা গুলেনাহার বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে অনলাইনে ব্যাটার সাথে কথা হইল, কইল মা, মুই ভালো আছো। মিশন শ্যাষ হয়ছে। কিছুদিন পর দ্যাশোত আসিম। তোমরা ভালো থাকো।

কথা বলতে বলতেই ভাষা হারিয়ে ফেলা মা আবারও বললেন, ছেলেটাক ক্যানে মরি গেইল, আল্লাহ মোকে আগোত নিয়া গেইলে তো হইল হয়। মুই ছেলেটাক দেখির চাও।

বাবা লতিফর রহমান বলেন, আমার বাবাটা দুর্ঘটনাত মারা গেছে শুনছি, মোর ছাওয়াটাক মুই দেখির চাও। কদদিন মোর ব্যাটাটা আসিবে। তাড়াতাড়ি যেন নিয়া আইসে বাবাক। সরকারের কাছে আবেদন সোনামুখটাক তাড়িতাড়ি যেন দেখির ব্যবস্থা করি দেয়।

বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চতুর্থ। সবার বড় আবুজার রহমানও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। দিনাজপুরের খোলাহাটি সেনানিবাসে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রথমে দুর্ঘটনার খবরটি তাকেই জানানো হয় সেনাবাহিনী থেকে। ছুটি দেওয়া হয় তাকে বাড়িতে ফেরার জন্য।

আবুজার রহমান বলেন, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ সে। বাকি দুই ভাই প্রাইভেট জব করলেও আমরা দুজন সরকারি চাকরিতে। একেবারে ছোট বাদশা মিয়া রংপুরে পড়ছে পলিটেকনিকে। তাকে হারানোর যে দুঃখ বেদনা কীভাবে সইব আমরা। একজন চলে যাওয়া মানে বিরাট ক্ষতি হওয়া।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বিষয়টি দেখভাল করছেন লাশ দেশের আনার ব্যাপারে।

চার বছর আগে জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিমু আকতারের বিয়ে হয় জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর থেকে কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না তার কান্না। তার পাশে এসে কান্নায় ঢলে পড়েছেন মা শাহিনুর বেগমসহ আরো তিন বোন।

কান্নাজড়িত অবস্থায় শিমু জানান, পরশু ভিডিও কলে কথা হয় ওর সাথে। জানালো ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই। মিশন তো শেষের পথে। কিছুদিন পরই আসছি। ভালো থাকো।

তিনি বলেন, দ্রুত আমার স্বামীর মৃতদেহ যেন দেশে আনা হয়। এই অনুরোধ করবো সরকার এবং সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সভ্য, সহজ সরল প্রকৃতি মানুষ ছিলো জাহাঙ্গীর। ভালো খেলোয়ারও ছিলো সে। তারমতো ছেলে এই এলাকায় নেই।

২০১৫সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেয় জাহাঙ্গীর। মিশনের যাওয়ার আগে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল সেনানিবাসে দায়িত্ব পালন করছিলো। ২০২১সালের ১২ডিসেম্বর মিশনে যায় জাহাঙ্গীর।

বুধবার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বেলায়েত হোসেন ও ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) লাইছুর রহমান পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে যান জাহাঙ্গীরের বাড়িতে।

ইউএনও বেলায়েত হোসেন জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

দাপ্তরিকভাবে এখোনো আমার কাছে কোনো তথ্য আসেনি। তারপরও বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। এর মধ্যে নীলফামারীর জাহাঙ্গীর আলমও রয়েছেন। ৩ অক্টোবর সোমবার রাত আটটা ৩৫মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৪ অক্টোবর দুপুর ১টা ৩৫মিনিটে) শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরিত হয়।

news24bd.tv/তৌহিদ