ধর্ম নিয়ে যা বললেন তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন

ধর্ম নিয়ে যা বললেন তসলিমা নাসরিন

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বহু বছর ধরেই দেশ থেকে দূরে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। তবে যেকোনো ইস্যুতেই তিনি সরব থাকেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।  

এবার ধর্মের সাথে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা-না রাখা ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে সৎকার নিয়ে তার অভিমত পোষণ করেছেন ৫৫ বছর বয়সী লেখিকা।

আজ (১০ আগস্ট, শুক্রবার) বিকেলে ফেসবুকে এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের কথা উদাহরণ হিসেবে টেনে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন, যেখানে স্বামী একজন মুসলমান আর স্ত্রী হিন্দু।  

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইনের পাঠকদের জন্য তসলিমা নাসরিনের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

“ঈহিণী আম্বরীণ. কী সুন্দর নাম! নামে কোনও ধর্মের গন্ধ নেই। ইমতিয়াজুর রহমান আর নিবেদিতা ঘটক -- দুজন মিলেই তাঁদের সন্তানের ওই নামটি রেখেছেন। নিজেরা ধর্মের অন্ধত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন বলেই ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।

স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে, কেউ কারও ধর্ম বদলাননি। দুজনই শিক্ষিত, সভ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ইমতিয়াজ চাকরি করেন রাজ্য সরকারের কর অফিসে, নিবেদিতা শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু ২০ বছরের বিবাহিত জীবন পার করার পর নিবেদিতার অসুখে মৃত্যু হলো দিল্লির হাসপাতালে। তাঁকে যথারীতি হিন্দু মতে দাহ করা হলো। ইমতিয়াজ দিল্লির মন্দিরে স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করতে চাইলেন, কিন্তু শ্রাদ্ধ করতে রাজি নন পুরুত ঠাকুর। কেন, নিবেদিতার স্বামী যেহেতু মুসলমান, তাই।

মুসলমানেরা হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করে করে মুসলমান বানাচ্ছে, এই নিয়ে ভীষণ ক্ষোভ হিন্দুত্ববাদিদের। এই ক্ষোভে বেশ কিছু মুসলমানকে ওরা খুনও করেছে। কিন্তু হিন্দু মেয়েরা মুসলমানদের বিয়ে করার পরও যদি ধর্মান্তরিত না হয়, যদি স্বধর্ম পালন করেই বিবাহিত জীবন যাপন করে, যদি স্বধর্মেই মৃত্যু হয় তাদের, তবুও কেন হিন্দুত্ববাদিদের ক্ষোভ এতটুকু কমে না! তাহলে মূল ক্ষোভটা ধর্মান্তকরণের ওপর নয়, মূল ক্ষোভটা মুসলমানের ওপর!

হিন্দু মুসলমানের পরস্পরের প্রতি যে ঘৃণা, তা কমবে যদি এভাবেই স্বধর্মে থেকে বিয়ে করে তারা, যদি ধর্মান্তরিত না হয়, যদি তাদের শিশু সন্তানকে কোনও বিশেষ ধর্মের শিশু বলে চিহ্নিত না করে, কোনও বিশেষ ধর্ম দিয়ে মগজধোলাই না করে, বরং উতসাহ দেয় প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে সব ধর্ম , সব দর্শন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে বিশ্বাস করার জন্য যেন কোনওটিকে বেছে নেয়, অথবা না নেয়।

অসাম্প্রদায়িক সমাজ এভাবেই তৈরি হয়। ভালোবাসা দিয়েই ঘৃণাকে দূর করতে হয়। যদি ভেতরে ঘৃণা পুষে রাখো, আর অসাম্প্রদায়িকতার অভিনয় করে যাও, দেখবে একদিন না একদিন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়বে সৌহার্দের নামে যা বানিয়েছো।

নিবেদিতার শ্রাদ্ধ করতে দিল্লির কালি মন্দিরের অস্বীকৃতি আমাদের বুঝিয়ে দিল, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের স্থান আজও ধার্মিকদের চৌহদ্দিতে নেই। ধর্মের জন্য যে কত অশান্তি, কত বিপত্তি। ”
 

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর