জাপানের দেওয়া যাত্রীবাহী জাহাজ সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে মিয়ানমার

সংগৃহীত ছবি

জাপানের দেওয়া যাত্রীবাহী জাহাজ সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে মিয়ানমার

অনলাইন ডেস্ক

৩.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারকে তিনটি জাহাজ সরবরাহ করে জাপান। সে সময় মিয়ানমারের জাপানি দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, জাহাজগুলো মিয়ানমারে জল পরিবহনের সক্ষমতা উন্নত করবে এবং রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। তবে নিয়ম উপেক্ষা করে জাহাজগুলোকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে মিয়ানমার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার জান্তা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এসব জাহাজগুলোকে অসংখ্যবার সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। তবে এর বহু আগে থেকেই ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালে জাপানের দান করা তিনটি জাহাজের দুটিকেই সামরিক খাতে ব্যবহার করে আসছে মিয়ানমার। রাখাইন রাজ্যের মায়ু নদীর বুথিডাং শহরে সৈন্য এবং সামগ্রী পরিবহনের জন্য ১০০ টিরও বেশি জাহাজ কাজ করছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করছে।

ফলে জাপান সরকারের উচিত মায়ানমারকে অ-মানবিক সহায়তা স্থগিত করা। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত জান্তা কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বলছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া প্রোগ্রাম অফিসার টেপেই কাসাই বলেন, ‘উন্নয়ন সহায়তার অংশ হিসেবে দেওয়া জাহাজগুলো মিয়ানমার জান্তার সামরিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার কার্যকরভাবে জাপানকে জান্তার সামরিক অভিযানের সমর্থক করে তোলে। জান্তার অপব্যবহার কমাতে অবিলম্বে এসব ব্যর্থ পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে জাপান সরকারকে। ’

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এ, রাখাইন রাজ্য সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন বিভাগকে জাপানের দানকৃত ‘কিসাপানাদি ১’ এবং ‘কিসাপানাদি ৩’ জাহাজগুলিকে ‘সিত্তওয়ে-বুথিডাং-সিত্তওয়ে সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। এর একদিন পর থেকে দুটি জাহাজ ১০০ এরও বেশি মিয়ানমার সৈন্য পরিবহন করে বুথিডাং-এ, সেই সঙ্গে তাদের উপকরণ সরবরাহ করে এসব জাহাজ।

এ ঘটনার পর ২৩ সেপ্টেম্বর, রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে রাখাইন রাজ্যের পুলিশ প্রধান এবং জাতীয় পরিবহন মন্ত্রী দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রীকে চিঠি লিখেন। সেই চিঠিতে জাহাজগুলোর ব্যবহারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাখাইন রাজ্য। যাতে মায়ানমারের ২০০৮ সালের সংবিধানের ২৫০ উল্লেখ্য করে বলা হয় ‘ইউনিয়নের স্থিতিশীলতা, সম্প্রদায়ের শান্তি ও প্রশান্তি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্র সরকারকে সহায়তা করার দায়িত্ব অঞ্চল বা রাজ্য সরকারের থাকবে। ’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জান্তা ছয়টি রাখাইন রাজ্যের শহর-মংডু, বুথিডাং, রাথেডাং, ম্রাউক-উ, মিনবিয়া এবং মাইবোন থেকে জাতিসংঘের সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করে এবং নৌকা লাইন এবং গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও জান্তা আরাকান সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার লক্ষ্যে গত আগস্ট থেকে ১৮ হাজারেরও বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতের শিকার আরও ৭০ হাজার। যাদের মধ্যে অনেকেই জান্তার বিধিনিষেধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তদন্তের জবাবে, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ৩ অক্টোবর বলেন, ‘জাপান সরকার, নীতির ওপর ভিত্তি করে উন্নয়ন সহযোগিতা সনদে সামরিক উদ্দেশ্যে জাহাজগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে যেতে বলে। এছাড়াও প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রদত্ত সুবিধা এবং সরঞ্জামগুলির যথাযথ ব্যবহার সুরক্ষিত করার জন্য কাজ করার কথা বলে তারা। সে সময় বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় জাপান। তবে এটি একটি ‘কূটনৈতিক বিষয়’ হওয়ায় আরও বিশদ প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিল তারা।

তবে এ ব্যাপারে জাপান সরকারের আর কঠিন হওয়া উচিত বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। উন্নয়ন সহযোগিতা সনদে অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার-ভিত্তিক শর্তগুলো চালু করার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। যেখানে বলা হয়েছে, ‘জাপান গণতন্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া, আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে প্রাপক দেশগুলোর পরিস্থিতির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেবে। গণতন্ত্রীকরণ, আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মানের একীকরণ প্রচারের লক্ষ্যে। জাপানের উচিত এই জাতীয় প্রকল্পগুলো বজায় রাখা তবে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। প্রয়োজনে জনগণের সরাসরি উপকার নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে তহবিল পুনর্নির্দেশ করা উচিত বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

কসাই জাপানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার প্রতি জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি মায়ানমার জান্তার অপব্যবহারকে মোটেও কমিয়ে দেয়নি। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য উপলব্ধ সমস্ত কূটনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে একটি অধিকার-সম্মানজনক গণতন্ত্র হিসাবে জাপানের উচিত তার সুনামের পূর্ণ ব্যবহার করা। ’

news24bd.tv/আমিরুল

এই রকম আরও টপিক