শতাধিক নারীর নগ্ন ভিডিও মানিক-নাসিমের ফোনে

সংগৃহীত ছবি

শতাধিক নারীর নগ্ন ভিডিও মানিক-নাসিমের ফোনে

অনলাইন ডেস্ক

ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে দু’জন সম্পর্কে মা-মেয়ে। মানিক হক নামের এক আত্মীয় তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। এ সুবাদে ওই মা ও মেয়ের উপর মানিকের কুদৃষ্টি পড়ে। আত্মীয় হওয়াতে সরাসরি কুপ্রস্তাব করারও সাহস পাচ্ছিল না।

তাই সে পরিকল্পনা করতে থাকে কীভাবে তাদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে তার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা যায়। পরিকল্পনা মাফিক মানিক ওই নারীর সঙ্গে আরও সুসম্পর্ক তৈরি করে। পাশাপাশি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়।
ওই নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একান্ত সময় কাটায় মানিক। ভিডিও-অডিও কলে একান্তভাবে কথা বলার সময় স্ক্রিণ রেকর্ডার দিয়ে কিছু নগ্ন ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে নেয়।

পরে ওইসব ছবি ও ভিডিও ওই নারীকে দেখিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে থাকে।  এদিকে ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে থামেনি মানিক। টার্গেট করে ওই নারীর মেয়েকে। কিন্তু মানিক কোনোভাবেই মেয়ের সঙ্গে মিশতে পারছিল না। তাই কৌশল হিসাবে সে ওই মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে তার অজান্তে শারীরিক সম্পর্ক করে। পাশাপাশি ওই সময় তার শরীরে কিছু ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে রাখে। মানিক সম্পর্কে ভুক্তভোগী মেয়েটির খালু হয়। পরে সেগুলো তার কাছে পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি রাজি না হওয়াতে বারবার মানিক হুমকি দিতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে মেয়েটি তার মাকে সব খুলে বলে। পরে ওই নারী পল্লবী থানায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানিকের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর) মানিক হককে মানিকগঞ্জ শিবালয় থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে।  

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মানিকের নেশাই ছিল শারীরিক সম্পর্ক করা। বিভিন্নভাবে নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রেমের ফাঁদ তৈরি করতো। তারপর ওইসব নারীর গোপন ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করতো। এখন পর্যন্ত অনেক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

ডিবি সাইবারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু মানিক নয় এ রকম আরেক প্রতারককে তেজগাঁও থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছেন। তার নাম নাসিম আলম। কুমিল্লার দেবিদ্বার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে শতাধিক নারীর সঙ্গে ভিডিও কলে আপত্তিকর মুহূর্তের রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে।  

ডিবি জানায়, নাসিম প্রথমে বিভিন্ন মেয়েকে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতো। তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। তারপর তাদের সঙ্গে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক শুরু করে। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে নাসিম ওই নারীদের ভিডিও-অডিও কলে আসার প্রস্তাব দিতো। কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে কথা বলার পর তাদেরকে আপত্তিকরভাবে ভিডিও কলে আসার কথা বলতো। নারীরা প্রথমে রাজি না হলে মিথ্যা রাগ-অভিমানের অভিনয় করতো। এক সময় ওই নারীরা তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে আপত্তিকরভাবে ভিডিও কলে আসতো। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতো নাসিম। ভিডিও কলে কথা বলার একপর্যায়ে গোপনে স্ক্রিন রেকর্ডার দিয়ে আপত্তিকর মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে নিতো। পরে ওই ভিডিও নারীদের ইনবক্সে পাঠিয়ে ভয় দেখাতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পর্নোগ্রাফি সাইটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একাধারে শারীরিক সম্পর্ক করতো আবার তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। এভাবে শতাধিক নারীর ভিডিও সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে মানিক। আদায় করেছে লাখ লাখ টাকা।  টাকা আদায় করে থামেনি। বরং উল্টো আরও বেশি টাকা আদায়ের জন্য তাদেরক ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।  

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে এক নারী এসে অভিযোগ করেন তার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় নাসিমের। এরপর ফ্রিল্যান্সিং কাজের কথা বলে কৌশলে নাসিম তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর নাসিম ওই নারীকে বিভিন্ন ধরনের লোভ-লালসা দেখাতে থাকে। এক সময় তাকে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে আসার কথা বলে। পরে তার কথামতো ভিডিও কলে আসায় নাসিম কৌশলে স্ক্রিন রেকর্ডার ব্যবহার করে আপত্তিকর মুহূর্তের ভিডিও সংগ্রহ করে নেয়। পরে সেগুলো তার কাছে পাঠিয়ে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাই মান সম্মান বাঁচাতে ওই নারী  নাসিমের দেয়া বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। তাতেই শেষ হয়নি এ ঘটনা। নাসিম ওই নারীর কাছ থেকে আরও টাকা দাবি করে। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে ওই নারী তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

news24bd.tv/আলী