কোন সতর্ক বার্তার অর্থ কী

সংগৃহীত ছবি

কোন সতর্ক বার্তার অর্থ কী

অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় সাগরে। তাই সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এর শিকার হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়।

যেগুলো উপকূল বা স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস বলছে, সমুদ্রতীরবর্তী বহু দেশ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।  

ঘূর্ণিঝড় অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, চীনে টাইফুন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইক্লোন।

ইতিহাসে বহু মারাত্মক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বিভিন্ন দেশে আঘাত হানার তথ্য আছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় বেশ বড় বড় বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বর্তমানে বাংলাদেশের উকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং।  

ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে উপকূলে আঘাত হানবে এটি। এরই মধ্যে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বাড়িয়ে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক এমন দুর্যোগের সময় এই ধরনের সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়ে থাকে। তাই জানমালের নিরাপত্তার জন্য সংকেতগুলোর অর্থ জেনে রাখা খুবই জরুরি।

চলুন এবার একে একে জেনে নেয়া যাক, সমুদ্রবন্দরের জন্য কোন সতর্ক সংকেতের অর্থ কী।

১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের অর্থ হলো বঙ্গোপসাগরের কোনো একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। জনগণকে সতর্ক করতে সাধারণত উপকূলে একটি লাল পতাকা স্থাপন করা হয়।  

২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত অর্থ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে।  

আর ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এর মানে হলো, বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন। এর ফলে উপকূলে দুটি লাল পতাকা স্থাপন করা হয় এবং সেই সাথে জেলেদেরও সমুদ্রে যেতে সতর্ক করা হয়।

৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া মানে বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার মতো বিপদের আশঙ্কা নেই।  

৫ নম্বর বিপদ সংকেতের অর্থ, অল্প বা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে মংলা বন্দরের ক্ষেত্রে এই ঝড় পূর্ব দিক দিয়ে অতিক্রম করবে।  

৬ নম্বর বিপদ সংকেত হলো, অল্প বা মাঝারি ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুযোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। মংলা বন্দরের ক্ষেত্রে পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে যাবে এই ঝড়।

৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয় যখন অল্প অথবা মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকে এবং এ কারণে আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকে। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ সময় বন্দরে তিনটি লাল পতাকা দেখানো হয়।  

৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ, প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে এবং মংলা বন্দরের পূর্ব দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এর মানে হলো, প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে এবং মংলা বন্দরের পশ্চিম দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।  

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টির বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।  

আরও পড়ুন :  সরাসরি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দেখুন এখানে

       ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, আঘাত হানতে পারে মঙ্গলবার ভোরে

       সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ

       অবশেষে 'সিত্রাংয়ে' পরিণত গভীর নিম্নচাপটি, ৪ নং সতর্কতা জারি

       বিশ্বের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের বেশির ভাগই বাংলাদেশে

সবশেষ ১১ নম্বর সংকেতটি হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত। এর অর্থ হলো, ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং স্থানীয় অধিকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নদীবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের জন্য সতর্কতা সংকেত আলাদা। নদীবন্দরের জন্য সর্বোচ্চ ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত রয়েছে। তবে সেগুলোর অর্থ সমুদ্র বন্দরের থেকে ভিন্ন। তাই কোন সতর্ক বার্তার অর্থ কী, সেটি ভালোভাবে বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।

news24bd.tv/আলী