হঠাৎ কালো রঙে পরিণত বৃক্ষ মানব রিপন

সংগৃহীত ছবি

হঠাৎ কালো রঙে পরিণত বৃক্ষ মানব রিপন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছরের কিশোর রিপন দাস। যাকে কমবেশি সকলেই চিনেন ‘বৃক্ষ মানব’ নামেই। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। সমস্ত শরীরই হয়ে পড়েছে কালো।

দিনমজুর বাবা মা চিন্তিত ছেলের এই অসুস্থতা নিয়ে।

বৃহস্পতিবার সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে রিপনের বাসায় গেলে রিপনকে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে যায়। রিপন দাস উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মহেন্দ্র রাম দাসের ছেলে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বারান্দার মেঝেতে একটি পাটির উপর শুয়ে আছেন রিপন।

পাশেই বসে আছে বাবা মহেন্দ্র রাম ও মা গোলাপী রানী। সংসারের কাজের পাশাপাশি অসুস্থ সন্তানের ডাকে ছুটে আসছেন মা গোলাপী রানী। ভ্যান চালিয়ে যেখানে নিজেদের সংসার চালানোই কষ্টকর সেখানে সন্তানের এমন অসুস্থতায় যেন পরিবারটির উপর এক বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যানা যায়,জন্মের তিন মাস পর থেকে হাত-পায়ে শেকড় গজানোর মতো বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছিল মহেন্দ্র রামের ছেলে রিপন। যেটি পরবর্তীতে ট্রি-ম্যান বা বৃক্ষ মানব সিনড্রোম বলে শনাক্ত করেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে ২০১৬ সালে সকলের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয় রিপনকে। সেখানে রিপনের প্লাস্টিক সার্জারিসহ তিনটি অপারেশন করা হয়। এরপর ১৮ সালের দিকে রিপন কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাসায় নিয়ে আসেন পরিবারের স্বজনেরা। পরবর্তীতে তাকে ও স্কুলেও ভর্তি করানো হয়। হঠাৎ গত দুই মাস আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে তার শরীরের রং। অবশেষে পুরো কালো রঙে পরিনত হয় রিপনরে শরীর। আবারো আগের মতোই,বাড়তে শুরু করে হাতে পায়ে শেকড়। ভারী হয়ে উঠে শরীর। হাটা চলাও করতে পারছেন না তিনি।

রিপন দাস বাংলাদেশ জানান, আগে আমার হাত-পায়ে শেকড় গজানোর মতো হয়েছিল। পরে চিকিৎসা করার পর আমি সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম। হঠাৎ করে আবার কিছুদিন থেকে আমার শরীর ত্বক কালো হয়ে যাচ্ছে। হাত পাগুলো আগের মত হেয়ে যা যাচ্ছে। আমি সুস্থ হয়ে আবার আগের মতো স্কুলে যেতে চাই। আমাকে একটু সাহায্য করুন।

রিপনের বাবা মহেন্দ রাম দাস বলেন, দুই মাস আগে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় ছেলে রিপন। তার পর থেকেই রিপনের শরীরের ত্বক কালো হয়ে যায়। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না সন্তানের। সমাজের সকলে যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেন তাহলে হয়তো আমার ছেলে বেঁচে যাবে।

এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ডা.ফয়সাল আজম মোবাইল ফোনে জানান, রিপন বর্তমানে যে সমস্যায় ভুগছেন সেটি হচ্ছে স্থানীয় কবিরাজের কাছ থেকে তেল নিয়ে ব্যবহার করার কারণে। তার ড্রাগ রিঅ্যাকশন হয়েছে। সেই ড্রাগ রিঅ্যাকশনের সমস্যার জন্য তারা আমার কাছে আসেন। বর্তমানে তার ড্রাগ রিঅ্যাকশন চিকিৎসা চলছে। সে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তবে চিকিৎসা করে বা প্লাস্টিক সার্জারি করলে সে হয়তো ভালো থাকবে কিন্তু ১০০ ভাগ সুস্থ হয়ে উঠবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক