যে ১০ শহরে একাকী ভ্রমণে সবচেয়ে নিরাপদ নারীরা

ভ্যানকুভার, কানাডা

যে ১০ শহরে একাকী ভ্রমণে সবচেয়ে নিরাপদ নারীরা

অনলাইন ডেস্ক

একজন বিচক্ষণ নারী পরিব্রাজক সব সময় বিশ্ব ভ্রমণে যাত্রার আগে গন্তব্যের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে অবগত হয়ে নেন। যে ১০টি শহর নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করেন, সেগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

ভ্যানকুভার, কানাডা

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল পর্বতমালা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই শহরটি তার উপকূলীয় সৌন্দর্য্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। স্ট্যানলি পার্কে হাটাহাটি করার সময় পশ্চিম কানাডার এই বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকাটিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে।

ওয়েস্ট এন্ড এলাকার কফিতে চুমুক দেয়ার সময় টের পাওয়া যাবে কানাডিয়ানদের আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বটা।

ভ্যানকুভার আর্ট গ্যালারি, লুকআউট টাওয়ার বা ভ্যানকুভার অ্যাকোয়ারিয়ামে মগ্ন থাকার সময় অন্য শহরের সঙ্গে এর তুলনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। সেখানে একা ভ্রমণের কথা মনেই থাকবে না। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য কোলাহলপূর্ণ জায়গা থেকে সবাই পালিয়ে এই ভ্যানকুভারেই আসতে চায়।

বার্গেন, নরওয়ে

সাতটি পর্বত এবং উত্তর সাগরের উপকূলের পার্শ্ববর্তী নরওয়ের সবচেয়ে সুন্দর এই শহরটি যেন প্রকৃতির এক টুকরো আশীর্বাদ। এর রাস্তা ধরে হাটার সময় মৃদুমন্দ হাওয়া শীষ দিয়ে জানান দেবে যে, ঠান্ডা ফিওর্ড পথচারিকে আরো আপন করে নিতে চাইছে। ভেগান বন্দর দিয়ে ব্রিগেন বরাবর সঙ্গ দেবে পুরনো স্থাপত্য এবং ইতিহাস।

ফ্লোয়েন-এর তাজা খাবারগুলো স্বাদ দিবে অমৃতের। ছোট মাছের বাজার পরিদর্শন শেষে শহরের সীমান্ত আলিঙ্গন করলেও ভ্রমণ পিপাসাটা রয়েই যাবে। তখন সবেমাত্র নতুন আসা পর্যটক ঘুরে আবার ফিরে চলেন অন্তরঙ্গ বার্গেনের উদ্দেশ্যে। এ যেন খেয়াল-খুশীমত অবাধে বিচরণের এক অপূর্ব নগরী, যার অধিবাসীরা নবাগতকে অভিভূত করতে অভ্যস্ত।

ভেনিস, ইতালি

স্বপ্নময় ভেনিস শুধুমাত্র নব দম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য নয়। ৬০০ বছর পুরনো এই নগরী একাকী ভ্রমণকারিনীদের জন্যও একটি নস্টালজিক জায়গা। এর ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলো ঘুরে দেখার সময় অবলীলায় মনে হতে পারে, যে ঠিক এরকমি একটা জায়গা হয়ত বহুদিন ধরে স্বপ্নে লালণ করে আসছেন।

শিল্পকলায় ভরা দ্য ডোজ প্যালেস এবং সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা ঘুরে দেখার সময় টের পাওয়া যায় যে, ভেনিস তার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত প্রাইভেসিটি দিতে পারে। তাই এখানে নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আর সূর্য অস্ত যাওয়ার লগ্নটি উপভোগের জন্য একটি বারের জন্য হলেও এ সময়টি একা কাটানো উচিত।

আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস

কিছুক্ষন পরপর লেক দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, কেন আমস্টারডামকে উত্তরের ভেনিস নাম দেওয়া হয়েছে। শহরটি প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ ভ্রমণকারীর পদচারণায় ধূলিধুসরিত হয়। এত মানুষের ভিড়ে নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না। কারণ প্রায় ১৫০০ টিরও বেশি সেতু দেখে শেষ করতে হবে। ভেনিসের মতোই এই শহরটি মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করবে, কিন্তু তাতে নিরাপত্তাহীনতার ভয় নেই। বরং আছে আদিম ও অকৃত্রিম প্লেটোনিক ভালবাসার রোমান্টিক অনুভূতি।

আমস্টারডাম বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ওল্ড সেন্টারের লেক, কেনাকাটা এবং কফিশপ এবং প্লান্টেজের যাদুঘর শহরে যে কোন নতুন মুখের সান্নিধ্য পেতে সদা প্রস্তুত।

কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক

একা একা কোথাও হারিয়ে যাবার জন্য এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলটি সেরা হতে পারে। ছোট শহরটি জুড়ে নর্ডিক মিথের গা ছমছমে আবহ নবাগতদের অবাক হওয়ার খোরাক যোগায়। কিন্তু এই চমকে যাওয়াটা নেতিবাচক নয়; বরং এর জন্যই কোপেনহেগেনে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।

নাইহ্যাভেনের লেক আর ভেস্টারব্রোতে কেনাকাটার জন্য হাল্কা পদব্রজে ভ্রমণই যথেষ্ট। তবে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ভয় নেই। বড় বড় শহরের জমকালো আলো না থাকলেও নিঝুম সড়ণীয় আড্ডাপ্রিয় প্রতিবেশীরা অকুন্ঠচিত্ত্বে বুঝিয়ে দেবে যে, পথচারিণী নিরাপদ আশ্রয়েই আছেন।

ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া

শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্য এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক কেন্দ্রে পরিপূর্ণ ভিয়েনা নগরী। বারোক দুর্গ এবং ইম্পেরিয়াল প্রাসাদের মধ্যে আসা ভ্রমণ গ্রুপগুলো দর্শনীয় স্থান গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাচীন এই রাজধানী ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে।

এখানকার গথিক গীর্জা এবং স্মারক ভাস্কর্যগুলো দেখার সময় পরিচয় হবে প্রায় শখানেক নিঃস্বঙ্গ পর্যটকদের সাথে। কারো হয়ত ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল, কারো বা চোখে সৌন্দর্য্যের নেশায় মোহগ্রস্ত দৃষ্টি। কিন্তু পর্যটকদের স্রোতের অনুকূলে অবচেতনেই একই সাথে বয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে।

এই নিরাপদ নগরীর সংস্কৃতির স্বাদ পেতে হলে হাজার পুলকিত দৃষ্টির সাথে এক হয়ে চোখ রাখতে হবে স্টেট অপেরায়। যোগ দিতে হবে ফিলহারমোনিকের কনসার্টে।

সিঙ্গাপুর সিটি

এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের এই দ্বীপ নগরীটি জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে ১৮১৯ সালের ব্রিটিশ বাণিজ্য উপনিবেশের। বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্রে থাকা অত্যাধুনিক হয়ে ওঠা শহরটি প্রায় ৫৫ লাখ লোকের আবাসস্থল। এই কোলাহলপূর্ণ শহর জুড়ে অনেক বছর ধরেই নিজেদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করছেন হাজারো নারী পর্যটক। ঘনবসতিপূর্ণ হলেও এর ৫০-এরও বেশি সবুজ উদ্যান একে রীতিমত উদ্যানের শহর বানিয়ে ফেলেছে।

এমনকি এগুলোতে ঘুরতে পায়ের চাপে পিষ্ঠ হওয়ার ভয় নেই। বরং এখানকার বাহারি খাবারে এশিয়ান ফিউশন এবং আমেরিকান খাবারের মিশ্রণ বহু জাতির মেলবন্ধনের সংকেত দেবে। এখানকার মরিচ কাঁকড়া খাওয়ার সময় অপরিচিতরা বৈঠকি ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে এর অদ্ভূত স্বাদের অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।

লিসবন, পর্তুগাল

লিসবন আটলান্টিক মহাসাগরের ধারে অবস্থিত এটি ইউরোপীয় শহরটি সগর্বে প্রকাশ করে এর সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে। শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটিতে স্বভাবতই পাহাড় বেয়ে উঠতে আসেন হাজারো হাইকার। খাড়া ঢাল বেয়ে একা একা ওপরে ওঠার সময় সবাই সতর্ক থাকেন রহস্যময় পাথরযুক্ত রাস্তাগুলোর ব্যাপারে।

অ্যালফামা, কিয়াডো এবং বাইরো অ্যাল্টোর আশেপাশের এলাকাগুলোর প্রাণবন্ত দৃশ্য মন কেড়ে নেয়ার মত। আর সেখানের কোন খাবারের দোকানে খেতে যেয়ে দোকানীদের অপূর্ব ব্যবহার সেই ভূবন ভোলানো দৃশ্যকে যেন আরো ন্যায্যতা দেয়। এই জায়গাতে মুলত সবাই নতুন খাবারের স্বাদ পরখ করতে যেতে চায়।

হংকং, হংকং

তিয়ান তান বুদ্ধের শহর হংকং নারীদের ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর অবিশ্বাস্য শান্ত পরিবেশের সাথে আধ্যাত্মিক ভাবগাম্ভীর্যের মিথস্ক্রিয়া এক পরম প্রাপ্তি। পো লিন মনাস্ট্রি পর্যন্ত ২৬৮টি ধাপ পেরনোর সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বুদ্ধে প্রতি তীর্থযাত্রীদের টানটা।

উন্নত অর্থনীতির শহর হওয়ায় এখানে অপরাধের হার খুবই কম। এমনকি প্রতি বছর তা আরো কমের দিকে যাচ্ছে। তবে ১ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য হলেও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকায় রাত ১২টার পর আলোকসজ্জাটা এখানে অদ্ভূত কোন ব্যাপার নয়। সে অনুসারে স্থানীয়রা অনায়াসেই রাতে চলাফেরা করতে পারেন। পরিবহন ব্যবস্থাও অনেক রাত পর্যন্ত চালু থাকে।

লন্ডন, ইংল্যান্ড

লন্ডনের সদা বিকশিত এবং বহুজাতিক সংস্কৃতির বিপজ্জনক গতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয়দের মনযোগ নিজেদের জীবন নিয়েই। তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও পারস্পরিক বাক বিনিময় ও সৌজন্যতার ক্ষেত্রে এরা বেশ ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

তবে এর গতিশীল লোকালয়ে একা ভ্রমণকারি নারী প্রায় সময় স্বাগত বোধ নাও করতে পারেন। তবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন ভ্রমণকারির জন্য লন্ডন দারুণ একটি জায়গা। শোরেডিচ, ব্রিক লেন বা ক্যামডেন টাউনের বাজারে একা একাই ঘুরে বেড়িয়ে লন্ডনের খাবার খ্যাতির সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যায়। থিয়েটার আর নাইট লাইফের জন্য হারিয়ে যাওয়া যাওয়া যেতে পারে গুঞ্জনপূর্ণ ওয়েস্ট এন্ডে।

news24bd.tv/ইস্রাফিল