লিজ ট্রাসের ফোন হ্যাক করেছিল মস্কোর গুপ্তচররা!

যুক্তরাজ্যের সাকেব প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস (ছবি: সংগৃহীত)

লিজ ট্রাসের ফোন হ্যাক করেছিল মস্কোর গুপ্তচররা!

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ব্যক্তিগত ফোন হ্যাক করা হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপালনকালে এমনটা করা হয়েছিল। আর হ্যাকের এই অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইল ।

প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ক্রেমলিনের হয়ে কাজ করা গুপ্তচররা লিজ ট্রাসের ব্যক্তিগত মোবইল ফোন হ্যাক করেছিল। গুপ্তচররা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক মিত্র কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কথোপকথনের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল।

সূত্রের বরাতে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, কথোপকথনের এক বছরের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে গুপ্তচররা। ফোনটিতে ভারী অ্যাপস ছিল।

বর্তমানে ফোনটি যুক্তরাজ্য সরকারের তত্ত্ববধানে সুরক্ষিত স্থানে রয়েছে।  

হ্যাকের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রচারণার সময়। কিন্তু ওই সময় বিষয়টি ধামাচাপা দেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ক্যাবিনেট সেক্রেটারি সাইমন কেস।

ডেইলি মেইল বলছে, বিদেশি হাতে পড়া ট্রাস ও কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের ওইসব কথোপকথনে বরিস জনসনের সমালোচনা ছিল। এতে করে তারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে পারতো।

হ্যাক হওয়া ফোনে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে  বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে অস্ত্রের চালান–সম্পর্কিত আলোচনাও ছিল।

বিষয়টি বুঝতে পেরে এক দশক ধরে ব্যবহার করা মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেন ট্রাস। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন আগে এমনটি করেন তিনি। এতে করে ক্যাবিনেট মিনিস্টার ও উপদেষ্টাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। কারণ তারা ট্রাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না।

বিষয়টি জানা এক সূত্র ডেইলি মেইলকে বলেছে, ‘বরিসকে বিষয়টি দ্রুত জানানো হয়। তিনি ক্যাবিনেট সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা বিষয়টি সম্মুখে না আনতে সম্মত হয়েছিলেন। ’

‘পুতিনের গুপ্তচররা এমনটি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি খুবই বাঝে ব্যাপার। কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন হ্যাক এতো সহজে করা যায়। গোয়েন্দাদের জন্য এটি ব্রিবতকর,’ যোগ করে ওই সূত্র।

ট্রাসের মিত্ররা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি (ট্রাস) উদ্বিগ্ন ছিল। কারণ এটি প্রকাশ পেলে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়তো। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিষয়টি ধামাচাপার ব্যাপার জনসনের সম্মতি না এসেছিল ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ঘুমাতে পারতো না।

কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক নেতা ও রাশিয়ার সমালোচনাকারী ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেন, ‘আমরা এর বিরুদ্ধে আছি। রাশিয়া সবসময় এটি করে আসছে। সাধারণত আমরা আমাদের ফোন সম্পর্কে তেমন বেশি চিন্তিত নয়। তবে মন্ত্রীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। তাদের ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। আমি ধরে নিচ্ছি আমার ব্যক্তিগত ফোন হ্যাক করা হয়েছে। ’

হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেন, ‘এটি গুরুত্বর একটি বিষয়। প্রত্যেক সরকারকে সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। ’

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি  ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা মন্তব্য করি না। সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের কাছে শক্তিশালী ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রীদের নিয়মিত নিরাপত্তা ব্রিফিং এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষার পরামর্শ। ’

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর অ্যান্টনি গ্লিস বলেন, ‘এখানে যা ঘটেছে তা আতঙ্কজনক। ওই সময়ের সরকার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শিথিল ছিল বলে বুঝা যায়। ’

‘আমাদের মন্ত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত ফোনের মাধ্যমে সরকারি কাজ করে দায়িত্বজ্ঞানহীনের পরিচয় দিচ্ছেন। এটা ভয়ঙ্কর। অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে হবে,’ যোগ করেন এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাসের ফোন হ্যাকের বিষয়ে সন্দেহের তীর যায় রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের দিকে। কারণ বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কি করছেন তা জানতে তাদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। ’

প্রতিবেদনে ডেইলি মেইল বলছে, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গোটা বিশ্বে উদ্বেগ রয়েছে। ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস সফটওয়্যার দিয়ে মালিকের অজান্তে মোবাইল ফোন হ্যাক করা যাচ্ছে। যেমনটা অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসের সঙ্গে করেছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

news24bd.tv/মামুন