দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘ইউজ হার্ট ফর এভরি হার্ট’ স্লোগান নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস-২০২২’ পালিত হয়েছে। সোমবার সকালে ৯টায় (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকে দিবসটি উপলক্ষে কার্ডিওলজি বিভাগের একাডেমিক এন্ড রিসার্চ সেল ও ইউনিভার্সিটি কার্ডিয়াক সেন্টার গণসচেতনতামূলক শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের ৪.৫% (বয়স ৪৬.৪+/-১৬.৩) মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে নারী ৩.৫% এবং পুরুষ-৬.০%।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশিরাই করোনারি ধমনী রোগের (করোনারি আর্টারি ডিজিজ) প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ এ আক্রান্ত হয়ে তুলনামূলক বেশি মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করছে (প্রতি এক লাখে ২০৩.৭ জন; শ্রীলংকায় ৮৪.৫ জন, পাকিস্তানে ২২২.৯ জন, নেপালে ১৫২.৬ জন, মায়ানমার এ ১৬৪.৭ জন, মালদ্বীপে ৫০.৯ জন, ভারতে ১৬৫.৮ জন, ভুটানে ২২১.৭ জন, আফগানিস্তানে ৩২৮.৬ জন)। হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স ৫৩ বছর, যেখানে পুরুষ রোগী ৮৮%। অপরদিকে স্বল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণালব্ধ তথ্যাদি থেকে পাওয়া যায়, প্রায় ৪৬% হৃদরোগীর বয়স ৫০ বা এর নীচে।

বাংলাদেশ স্টেপস সার্ভে ২০১৮ এর মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর ৭৩.২% ঘটেছে অসংক্রামক ব্যাধিতে। তার মধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ- ৩৬.১%, ক্যান্সার- ১১.২%, ক্রনিক রেস্পাইরেটরি ডিজিজ ৯.৩%, ডায়াবেটিস মেলাইটাস- ৫.৮% ।

সেমিনারে উঠে আসে হৃদরোগ প্রতিরোধের কিছু পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য সম্মত সুষম খাবার, ধূমপান পরিহার করণ, ও প্রাত্যহিক শারীরিক ব্যায়াম হার্ট ভাল রাখে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দৃঢ় করা জন্য সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। কারণ ব্যক্তি নিজে সুস্থ থাকলে দেশ ভাল থাকবে। যদি কোন ব্যক্তি একদিন অসুস্থ থাকেন, তিনি অফিস করতে পারবেন না। তার অসুস্থতার কারণে অনেক কাজ বাকি থাকবে। ব্যক্তির কার্য সম্পাদন সম্পন্ন করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। সুতরাং সুস্থ থাকা সকলের প্রয়োজন। সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। ’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির  শ্রেণিভেদ নেই। যে কোন শ্রেণির ব্যক্তিরা হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এ রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকদের নিজ ঘর থেকেই সচেতন হতে হবে। কারণ আমাদের কাছে অনেক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্য হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে আসেন। তাদের অধিকাংশ হৃদরোগ সচেতন নয়। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে হৃদরোগ সচেতন হতে হবে। ’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তাফা জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার ও ডা. মোস্তাহিরুল হক। সভাপতিত্ব করেন হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন।

এসব কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর মাহমুদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রি. জে. ডা, নজরুল ইসলাম খান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে: ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন, মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুবসহ হৃদরোগ বিভাগের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

news24bd.tv/FA