করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দার হুমকি, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট ও খাদ্য সংকট এমন সব সমস্যা নিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। এমনকি কমে গেছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের গতি। এমতাবস্থায় গোটা পৃথিবীতে আগের তুলনায় বেশি মেরুকরণ হয়েছে। এমন পটভূমিতে দরকার এক নতুন বিশ্ব নেতৃত্বের।
আসন্ন ডিসেম্বরে জি-২০, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলন হবে। এসব সম্মেলনে সভাপতিত্বের জায়গায় দেখা যাবে ভারতকে।
গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে ভারত।
উন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ সম্মেলনে নিয়মিত আমন্ত্রণ পেয়ে আসছে ভারত। এমনকি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সংস্থা ব্রিকসের সদস্যও দেশটি। এ ছাড়া সামরিক জোট কোয়াড ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সদস্যও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশটি।
এ ছাড়াও ভারত কার্যকরভাবে আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় জাতিসমূহ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলন ও বিভিন্ন স্তরের বৈঠক থেকে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়।
বর্তমানের এই কঠিন সময়ের সমাধানে রাস্তা খুঁজছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা ভূ-রাজনৈতিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্তরে অনিশ্চয়তা দূরে পদক্ষেপগুলোর সন্ধানে রয়েছে। সমস্যা সমাধানের রাস্তা আসতে পারে আসন্ন জি-২০ সম্মেলন থেকে। অতীতেও এমনটা দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জি-২০। এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বীজ বপন হতে পারে। তবে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিতে পারছে না এই জোটটি। কারণ বর্তমানে তাদের দৃষ্টি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে।
বর্তমানে বিশ্ব যে অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে তার থেকে উদ্ধারে এক দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজন। যার কি না রাষ্ট্রনায়কত্বের মহান গুণাবলী রয়েছে।
নতুন ভারত তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনার ঝড়ের মধ্যেও দেশকে দ্রুত এগিয়েছেন তিনি। এমনকি বৈশ্বিক অবস্থানে নিজের দেশকে একটি উজ্জ্বল জায়গায় নিয়ে গেছেন। তিনি এমন এক ভারত তৈরি করছেন যে দেশ কি না বৈশ্বিক মঙ্গলের জন্য নিজের সম্পদ ও ক্ষমতা ভাগ করে নিতে দ্বিধাবোধ করছে না।
মোদীর অধীনে ভারতের বিদেশ নীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রাচীন ‘বাসুদেব কুটুম্বকম’ নীতি কয়েক হাজার বর্ষ ধরে প্রচলিত থাকলেও মোদীর হাত ধরে তা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেছে। সেই নীতিতে চলছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি।
মহামারির প্রতিক্রিয়ায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরব কর্তৃক আহ্বান করা জি-২০ সম্মেলন ডাকা হয়। ওই সম্মেলনে অংশ নিয়ে মোদী একটি জনগণকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মোদীর বৃহত্তর এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, ভারতের প্রচেষ্টা হলো বিশ্বব্যাপী অবদান রাখা । এর জন্য নিজেদের অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং কৃতিত্বগুলোকে কাজে লাগাতে চাই দেশটি। মহামারীর সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহায়তা করতে অপারেশন সঞ্জীবনী ও অক্সিজেন এক্সপ্রেস মতো কাজ করেছেন মোদী। এ ছাড়া নবায়ন যোগ্য জ্বালানি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় গোটা বিশ্বে ছাপ রেখেছেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী।
চলতি বছরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের মেয়াদ শেষ হবে। তবে ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের এই সংস্থায় নিজেদের চিহ্ন তৈরি করেছে দেশটি। এসবই সংস্থাটিতে স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ভারতকে সমর্থন করবে ও শক্তিশালী করবে। আর ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
লেখক: হর্ষ বর্ধন সিংলা
news24bd.tv/মামুন