গ্যাসের দাম নির্ধারণে ইইউর পদক্ষেপের সমালোচনা কাতারের

কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী সাদ শেরিদা আল কাবি (ছবি: সংগৃহীত)

গ্যাসের দাম নির্ধারণে ইইউর পদক্ষেপের সমালোচনা কাতারের

অনলাইন ডেস্ক

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকেই জ্বালানি সংকটে ভুগছে ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যেই তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক প্লাস। এসবের জেরে বিশ্ব বাজারে বাড়তে থাকে তেলের দাম। এমতবস্থায় গ্যাসের এক দাম বেঁধে দেওয়া বা মূল্যসীমা নির্ধারণের (প্রাইস ক্যাপ) করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

এবার জোটটির এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় তেল উৎপাদনকারী দেশ কাতার।

মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী সাদ শেরিদা আল কাবি ইইউর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি এ প্রস্তাবকে ‘কপটতা’ বলে আখ্যা দেন।

ব্লুমবার্গ বলছে, জ্বালানি খরচ কমানোর প্রয়াসে ইউরোপীয় কমিশন একটি গতিশীল মূল্য প্রক্রিয়া ব্যবহার করে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিতে চায়।

এমনটা তারা আসন্ন শীতে করতে আগ্রহী। কারণ ব্ল্যাকআউটের শঙ্কায় রয়েছে তারা।

গত রোববার দেওয়া এই সাক্ষাতকারে সাদ শেরিদা আল কাবি বলেন, ‘মুক্ত বাজারে বিশ্বাসী ইইউ। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী নয় তারা। এ নিয়ে নিয়মও করেছে তারা। তবে গ্যাসের দাম নির্ধারণের একচেটিয়া প্রস্তাব, তাদের নিয়মকেই লঙ্ঘন করে। ’

‘বাজার পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধে একতরফা পরিকল্পনার অংশ এই প্রস্তাব,’ যোগ করেন কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী।

সাদ শেরিদা আল কাবি বলেন, ‘প্রাকৃতিক এই জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হলে গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ কমে যাবে। এমনকি গ্যাস থেকে কিছু ক্রেতা বঞ্চিত হবে। ইউরোপীয়রা জ্বালানি বহনকারী কার্গোগুলোকে মাত্র এক সেন্ট ডলার দাম বেশি বলে গ্যাস নিয়ে যাবে। ’

প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ জানায়, বিশ্বব্যাপী এলএনজির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করে কাতার। তাদের মূল ক্রেতা এশিয়ার দেশগুলো। তবে জ্বালানি সংকটে কাতার থেকে বিপুল পরিমাণে এলএনজি আমদানি করতে আগ্রহী ইইউ। এমনকি কাতারের বিরুদ্ধে নিজেদের করা চার বছরের একটি তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপ মহাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোটটি। এতে করে উদ্বেগ বেড়েছে।

কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ান পাইপলাইনে গ্যাস প্রবাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে না এলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপের গ্যাস সংকট থাকবে। এলএনজি সরবরাহের জন্য জার্মান কোম্পানি আরডাব্লিউই এজি এবং ইউনিপার এসই-এর সঙ্গে আলোচনা  করেছে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া কিছু এশিয়ান ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ’

চলতি বছরে কাতার থেকে এলএনজি আমদানিতে তোড়জোড় শুরু করে ইউরোপীয় নেতারা। তবে এতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে তারা। কারণ কাতার পূর্বের ন্যায়ই গ্যাস উৎপাদন করছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। এরপরেই ইউরোপের বাজারে গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। ওই সময় কাতার ইউরোপ থেকে নিজেদের জ্বালানিবাহী কার্গো সরিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আগে থেকেই চুক্তি রয়েছে কাতারের। এ জন্য ইউরোপকে সম্পূর্ণ গ্যাস দেওয়া নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় কাতার।

সাদ শেরিদা আল কাবি বলেন, ‘কাতার এটিকে আটকে রেখেছে। কিন্তু কিছুই স্থায়ী নয়। আমরা যা পছন্দ করি তা করার অধিকার আমাদের আছে। ’

‘তবে এটি একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দিয়েছিলাম। যখন আমাদের বিমুখ করা উপযুক্ত হবে, আমরা করবো,’ যোগ করেন তিনি।

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে ইচ্ছুক কাতার। এই দশকের শেষ নাগাদ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ উৎপাদন বাড়াতে চায় তারা। এতে করে প্রতি বছরে তাদের মোট গ্যাস উৎপাদন দাঁড়াবে ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে।

news24bd.tv/মামুন