বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেবো: প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত ছবি

বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেবো: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা আদর্শকে এবং একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতেই জেলখানায় নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান শুধু যে খুনিদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন তা নয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েও তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

যখন একটি দেশের রাষ্ট্রদূত হয় একজন খুনি, তখন সেই দেশের ভাবমূর্তি কোথায় থাকে?

জিয়া ক্ষমতায় আসার পর একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে। জিয়াউর রহমান দলও তৈরি করে। অথচ হাইকোর্টের রায় আছে, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়া।  অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখলকারী সে যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে দল গঠন করে তখন সেই দলও তো অবৈধ হয়ে যায়।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর একের পরে ক্যু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সৈনিক, অফিসারদেরকে একে একে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে জানেই না তাদের অপরাধ কি? এমনও ঘটনা ঘটেছে কারাগারে-একই দিনে দশ জনের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এই জিয়াউর রহমান ফাঁসি দিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, বগুড়া, রাজশাহীতে। রাষ্ট্রপতির অর্ডার ছাড়া তো ফাঁসি হয় না।

যে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, সেই সার্বভৌমত্বটাকে তারা নষ্ট করতে চেয়েছিল। যে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, সে একাধারে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয় নিজেকে। সে আবার গণতন্ত্র আনে কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক অপপ্রচার করেও আন্তর্জাতিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছতে পারেনি তারা।  স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলেন যা বাংলাদেশে ইতিহাস। তিনি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলেন। তিনি সব সময় চেয়েছিলেন বাঙালি জাতি মর্যাদার জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া হয়নি।

একটা সমাজকে ধ্বংস করার যত কাজ সব তারা করেছে। মাদক ধরিয়ে দিয়ে যুব সমাজকে তারা প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাত। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিলো অস্ত্রের ঝনঝনানি।

শুধু জিয়াউর রহমান কেন? জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেই খুনিদেরকে প্রশ্রয় দিয়েছে এরশাদও। খালেদা জিয়াতো আরো এক ধাপ বেশি যায়। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করেনি। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হয়েছে যাদের, তারা অনেকেই খালেদা জিয়া ক্যাবিনেটের মন্ত্রী ছিল, উপদেষ্টা ছিল। অর্থাৎ একদিকে যুদ্ধ অপরাধী আরেক দিকে খুনি।

ওদের চরিত্রটাই আসলে এরকম। খালেদার আমলে সার চাওয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কৃষককে। রোজার দিনে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল তাদের ন্যায্য মজুরীর জন্য, কিন্তু তারা পেয়েছিল বুলেট।

তিনি বলেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে আবারো জেলে পাঠিয়ে দেবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ শত শত নেতাকে হত্যা করেছে বিএনপি। প্রকাশ্য দিবালোকে ১৩টি গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয় আওয়ামী লীগের সমাবেশে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা ও তারেক জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা বলে, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। এটা সম্ভব?

জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভালোভাবে জানে জিয়াউর রহমান জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। আর তার স্ত্রী খালেদার খুবই দরদ খুনিদের প্রতিও। এ জন্য মৃত ব্যক্তিকে প্রমোশন দিয়ে, বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে সেই অত্যাচারের প্রতিশোধ নেইনি। নিলে তাদের অবস্থা করুণ হতো। আওয়ামী লীগের নেতারা মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাতো।  

শেখ হাসিনা আরও বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাজা হয়েছে। তিনি ওই ফান্ডে কোনো টাকা রাখেননি। সব টাকা  নিজের নামে রেখেছিলেন। আর আওয়ামী লীগ তো তার নামে মামলা দেয়নি। তার প্রিয় ব্যক্তি ফখরুদ্দীন আহমদ ওই মামলা দিয়েছিল। খালেদাই তো তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর করেছিল। একই সঙ্গে নয়জন সিনিয়রকে টপকে সেনাবাহিনীর প্রধান পদে বসানো হয়েছিল মঈন ইউ আহমদকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সময় উত্তর বঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো। আমরা সেই অবস্থার উন্নতি করেছি। খালেদার সময় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ‘উন্নয়ন উইং’ খুলেছিল। কিন্তু সেটা দেশের উন্নয়নে নয়, নিজেদের দুর্নীতির উন্নয়নে তা খোলা হয়।

তারেক রহমানের শাস্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারেক রহমানের শাস্তি হয়েছে। অথচ তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দেন। এরপর বিদেশে বসে রাজনীতি শুরু করে। বিএনপির দুই নেতাই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই হলো বিএনপির অবস্থা। আপনারা জানতে চাইবেন, বিএনপির মাথা কে?

করোনার সময় আত্মীয়-স্বজনরা যখন মরদেহ রেখে পালিয়ে যেত, তখন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা সেসব মরদেহ দাফন-কাফন করিয়েছে। এ জন্য আমার দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।  

বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ সরকার, ক্ষমতা দখলকারীর দ্বারা গঠিত অবৈধ দলগুলো আজকে খুবই লাফালাফি করে, খুব ভালো কথা। আমরা বলেছি- শান্তিপূর্ণ মিছিল, মিটিং করো; আমরা কিছুই করবো না। কিন্তু ওই যে লাঠিসোটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখানো.. আর যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয়, আমরা ছাড়বো না।  

পদ্মাসেতু নিয়ে নানা কথা হয়েছে। আমরা নিজেদের টাকায় সেই সেতু নির্মাণ করেছি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে। কারণ বঙ্গবন্ধুই শিখিয়েছেন সব বাঁধা পেরিয়ে উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়।

বিএনপির রাজনীতি মানে বোমা মারার রাজনীতি, দুর্নীতি করার রাজনীতি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তাদের নেতাদের দুর্নীতির কারণে দেশে উন্নয়ন হয় না। আর আওয়ামী লীগ জনগণের উন্নয়নে রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে শুধুই জনগণের উন্নয়ন হয়। আমরা জনগণের জন্য রাস্তা নির্মাণ করি। আর বিএনপি আন্দোলনের নামে সেই রাস্তা কাটে। এটাই হলো বিএনপির রাজনীতি।