কোরবানির ফজীলত

প্রতীকী ছবি

কোরবানির ফজীলত

মুফতী শাহেদ রহমানী

কোরবানি মুসলিম জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ইসলামের মৌলিক ইবাদতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত হিসেবে শরীয়তে মুহাম্মাদীতেও এর বিধান আরোপিত হয়েছে। রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও প্রতি বছর তা আদায় করতেন, হাদীস ও সুন্নাহে উম্মতের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের প্রতি তা আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর নিয়মনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এমনকি রাসূল (সা.) জীবনের সর্বশেষ বছর নিজে ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, কোরবানির দিনসমূহে আল্লাহ তা’আলার নিকট কোরবানি করার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো আমল নেই। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, লোম, খুরসহ আল্লাহ তা’আলার দরবারে উপস্থিত হবে। আর কোরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্ত জমিনে গড়ানোর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলার দরবারে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা এতে আনন্দিত হও।

(তিরমিযী, হা. ১৪৯৩)

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোরবানি কী জিনিস? উত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, তা তোমাদের আদি পিতা ইব্রাহিম
(আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবাগণ আরজ করলেন, তাতে আমাদের কী লাভ? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময় একটি সওয়াব দেওয়া হবে। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ভেড়ার প্রতিটি লোমের বিনিময়েও সওয়াব দেওয়া হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, ভেড়ার প্রতিটি লোমের বিনিময়েও সওয়াব প্রদান করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ২/৩৮৯)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতেমা (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ফাতেমা! তোমার কোরবানির জন্তুর নিকটে যাও, কেননা ওই জন্তুর রক্তের প্রথম ফোঁটা বের হতেই তোমার পূর্বের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। ফাতেমা (রা.) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই
পুরস্কার কি শুধু রাসূল পরিবারের বৈশিষ্ট্য, নাকি সমস্ত মুসলমানের জন্য? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, 'না , তা সকল মুসলমানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। (মুসনাদে বায্যার : হা. ১২০২)

অপর বর্ণনায় হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, তোমার কোরবানির পশুর গোশত, রক্তকে সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে তোমার আমলনামার সাথে ওজন করা হবে। (আত্তারগীব,আবুল কাসেম আসবাহানী, হা. ৩৪৮)

হযরত হুসাঈন (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রশান্তচিত্তে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরবানি করল, ওই কোরবানি তার জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হবে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, {আল মু’জামুল কাবীর সূত্রে} ৪/১৭)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ঈদের দিন কোরবানির খরচের চেয়ে আল্লাহ তা’আলার নিকট অন্য কোনো খরচ বেশি পছন্দনীয় নয়। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ [আল মু’জামুল কাবীর সূত্রে] ৪/১৭)

সূত্র: মাসিক আল-আবরার, ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত খবর