পঞ্চগড়ে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শত শত গরু। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
এদিকে লাম্পি স্কিন রোগে গবাদি পশু মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ অফিসের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এক মাস আগে দেখা দেয় লাম্পি স্কিন রোগ। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
পার্শ্ববর্তী বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ৬৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। রোগটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও বেড়েছে এই রোগের প্রকোপ।
শুরুতে সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি গুটি উঠছে। তারপর পায়ের হাঁটু, গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় জমছে পানি। জ্বর ও প্রচণ্ড ব্যথায় খেতে পারছে না আক্রান্ত গরুগুলো। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউ কেউ আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা রাখছেন। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
২ বছরের কম বয়সের গরু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। অনেক কৃষক কিস্তির মাধ্যমে এনজিওগুলো থেকে ঋণ নিয়ে এসব গরু কিনে লালন পালন করছিলেন। রোগে আক্রান্ত গরু মারা যাওয়ায় কৃষক পড়েছেন বিপাকে।
খামারি ও কৃষকদের অভিযোগ প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে বড় অংকের ফি দিতে হয়। তা ছাড়া তারা আসেন না। নিরুপায় হয়ে গ্রামের পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। গরু প্রতি খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। লাম্পি স্কিন ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও প্রাণিসম্পদ অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো নজরদারি নেই। মহামারি ঠেকাতে কৃষক ও খামারিরা এলাকাভিত্তিক জরুরি চিকিৎসা ক্যাম্প চালুর দাবি জানিছেন।
বড় দলুয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার একটি গরু মারা গেছে, যার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। হাজারো চেষ্টা করে অফিসের কোনো চিকিৎসককে পাইনি। প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তারদের কল করলে তারা ১ হাজার টাকা ভিজিটের কমে আসেন না। আমরা সরকারি কোনো ওষুধও পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে গ্রামের পশু ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্ত তারপরও কাজ হচ্ছে না।
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, তেঁতুলিয়ায় লাম্পি নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে না। খামারিদের কখা চিন্তা করে আমরা টিম গঠন করেছি। তারা দিন রাত কাজ করছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিম জানান, এখন শীতকাল। এই রোগ কমে আসবে। মহামারি আকার এখনো ধারন করেনি। আমাদের কোনো কর্মচারি বা ডাক্তার টাকা নেন না। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।