বঙ্গবন্ধু সব সময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন : প্রধানমন্ত্রী 

সংগৃহীত ছবি

বঙ্গবন্ধু সব সময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন : প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীর পিতা সব সময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমারও নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি কাজে নারীদের আমরা অন্তর্ভূক্ত করছি।

 

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল তিনটার কিছু আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট একটি কালো দিন। সেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।

একই সঙ্গে আমার মাকে হত্যা করা হয়। মেয়েরা স্বামীর কাছে কত কিছু দাবি করে কিন্তু আমার মা বাবার কাছে কখনো কিছু চাননি। ঘাতকের দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে তখন আমার মা বলেছিলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছ আমাকেও হত্যা করো।

তিনি আরও বলেন, হানাদার বাহিনী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। তখন জাতির পিতা সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স এনে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন।

মুক্তিযুদ্ধে নারীদেরও সমান অবদান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে যুবসমাজ যুদ্ধে চলে গিয়েছে, আর নারীরা ঘরে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করেছে। হানাদার পাক বাহিনীর সদস্যরা কোথায় আছে সে খবর নারীরা পৌঁছে দেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। বহু মেয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য। যে কোনো অর্জনে নারীদের অবদান রয়েছে এবং নারীদের অবদান থাকবে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী, তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আপনার জানেন বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছিলো মেয়েরা নির্যাতিত হলে বিচার চাওয়ার সাহস পর্যন্ত পেত না। সমগ্র জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইডের কমিটি করে দিয়েছি। সেখানে আলাদা করে বরাদ্দ দিচ্ছি। এখন যে কোনো মেয়ে নির্যাতিত হলে বিচার চাইতে পারে। যার অর্থ নেই তার জন্য আমরা অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বিচার প্রার্থী নারীর জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছি। মেয়েদের নিরাপত্তা ও বিচারের জন্য বর্তমান সরকার সবসময় পাশে আছে। নারীদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে আমার ব্যবস্থা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েরা এখন সব জায়গায় কাজ করে। মেয়েদের ঢাকায় থাকার জন্য কর্মজীবী হোস্টেল করে দিয়েছ। এমনকি জেলা উপজেলায় পর্যন্ত কর্মজীবী হোস্টেল করার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। যাতে সব জায়গায় নারীরা নিরাপদে কাজ করতে পারে। ঢাকা শহরে মেয়েদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করেছি।

ইসলাম ধর্মই একমাত্র নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। সম্পদে স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না।

তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ  করি। জনগণের কল্যাণেই আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু বিরোধী পক্ষ বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার-নির্যাতন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রারাসীরা সারা দেশে অত্যাচার চালিয়েছে। মেয়েদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানের মানুষ তাদের অত্যাচারের শিকার হয়নি।  

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলো। আমরা আইভি রহমানকে হারালাম। আমরা মহিলা আওয়ামী লীগের চারজন নেত্রীসহ ২২ নেতা কর্মীকে হারিয়েছি। আমরা সন্ত্রাস চাই না। যে গ্রেনেড যুদ্ধের ময়দানে ছোড়া হয় সেই গ্রেনেড বিএনপি-জামায়াত মারলো আমাদের ওপর। সেদিন মানবঢাল বানিয়ে আমাকে নেতাকর্মীরা রক্ষা করেছে। কিন্তু আমরা তো আইভি রহমানসহ অনেক নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। এত জঘন্য কাজ বিএনপি-জামায়াত করতে পারে যা কল্পনাও করা যায় না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছিল, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ঠিক একইভাবে অত্যাচার করেছে।  

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  
news24bd.tv/আলী