জমজ দুই পুত্র সন্তানের বয়স মাত্র দুই বছর। তাদের বাবা বাচ্চু হাওলাদার গার্মেন্টস কর্মী। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে চট্টগ্রাম থেকে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর বাড়িতে ফিরছিলেন বাচ্চু (২৭)।
ব্যাগ ভর্তি করে মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য নতুন কাপড় কিনেছিলেন তিনি।
কিন্তু নিজ হাতে পরিবারের কাছে জামাকাপুর তুলে দেওয়া হলো না। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে লঞ্চ থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন তিনি। তার ঈদ যাত্রা জীবনের শেষ যাত্রায় পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে চাঁদপুর থেকে বরিশালে যাওয়ার জন্য এমভি আরএ জমজম লঞ্চে ওঠেন বাচ্চু।বাচ্চু সহযাত্রী ও চাচাত ভাই আরিফুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ও ঢেউয়ের কারণে লঞ্চের কার্নিশ থেকে নদীতে ছিটকে পড়ে বাচ্চু। তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই অবস্থায় লঞ্চ থামিয়ে কিছু সময় সন্ধান করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
অপর এক সহযাত্রী পত্তাশী গ্রামের কালাম জানান, বাচ্চু চট্টগ্রামের বিএইচ হাওয়ে নামের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত। আমরা এক সঙ্গেই লঞ্চে ছিলাম। লঞ্চে কোনো বসার সিট পাইনি। তাই কার্নিশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাই যাত্রীদের চাপে বাচ্চু নদীতে পড়ে যায়। নদীতে পড়ে যাওয়ার পরে সে দুই বার হাত তুলে ছিল। আমরা তাকে উদ্ধার করতে পারি নাই। আমরা একই গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। বাচ্চু বাড়িতে যাওয়ার জন্য খুব উদগ্রীব ছিল।
এ দিকে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে বাচ্চুর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলে নিখোঁজের খবরে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন মা মর্জিনা বেগম। স্ত্রী রেহেনা বেগম জমজ দুই সন্তান রাকিব ও রাহাতকে নিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। বাচ্চুর বাবা মজিবুর রহমান হাওলাদার একজন বর্গাচাষী। বাচ্চু সংসারের অধিকাংশ ব্যয়ভার বহন করতেন। সন্তানের নিখোঁজের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মজিবুর রহমান। তিনি আক্ষেপ করে বলছেন আমার ছেলেকে না পেলে আমি বাঁচব না।
বাচ্চু নিখোঁজের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মানুষজন ছুটে আসে তার বাড়িতে স্বজনদের কি বলে সান্ত্বনা দেবেন সবাই বাকহারা।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/ইমন/ তৌহিদ)