লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করছে চীনা পুলিশ
লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করছে চীনা পুলিশ

ছবি: গেটি ইমেজ

লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করছে চীনা পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক

সপ্তাহ খানেক আগে চীনে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে এটি ছড়িয়ে পরে গোটা দেশটিতে। তবে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয়েছে চীনা পুলিশ। আর এতেই বিক্ষোভের সব নমুনা শেষ হয়ে গেছে।

খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, সপ্তাহ খানেকের পর চীনের বিক্ষোভ প্রায় মৃত অবস্থায় পৌঁছে গেছে। বিক্ষোভ দমনে চীনা পুলিশের কঠোরতার পরই এমনটা দেখা গেছে।

বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

কিছু স্থানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের দমন করা হচ্ছে। এমনকি কিছু স্থানে মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের ফোনে তল্লাশি চালানো হয়। তবে বিদেশে থাকা চীনারা বিশ্বের অন্তত এক ডজন শহরে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার জিনজিয়াংয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত শহর উরুমকিতে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হতাহতের জন্য লকডাউনের বিধিনিষেধকে দায়ী করেন স্থানীয়রা। মূলত ওই ঘটনা থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। দেশের বিভিন্ন শহরে রাজপথে নেমে সরকারের কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে হাজার হাজার চীনা নাগরিক। এমনকি অনেকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পদত্যাগ করার মতো বিরল আহ্বান জানান।

সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে মূহুর্ত্বেই বিক্ষোভস্থল ঘিরে ফেলে চীনা পুলিশ। অন্যদিকে দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে মূল বিক্ষোভস্থল একটি ব্যারিয়ার দিয়ে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উভয় শহরে টহল দেয় পুলিশ বাহিনী।  

সোমবার রাতে দক্ষিণের শহর হাংজুতে একটি ছোট বিক্ষোভ দেখা যায়। তবে মূহুর্ত্বেই সেখানে পুলিশের সদস্যরা হাজির হন ও কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।

এ দিকে হংকংয়ে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে শহরের কেন্দ্রস্থল ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তারা চীনের মূল ভূখণ্ডের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। লন্ডন, প্যারিস, টোকিওর মতো বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে থাকা চীনা দূতাবাস এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে অনেকে।

সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্র থম্পসন বিবিসিকে বলেছেন, ‘চীনের বিক্ষোভ এতো সহজে শেষ হবার নয়। বিক্ষোভকারীরা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ও রাস্তায় বিক্ষোভ করবে। মত বিরোধীদের দমাতে কতটা সক্ষম চীনা পুলিশ তা এখন বুঝা যাবে। ’

বিবিসি বলছে, পুলিশ লোকদের থামিয়ে তাদের মোবাইল ফোন চেক করছে। ফোনে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) সেট আপ করা হয়েছে কি না তা দেখছে তারা। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম ও টুইটারের মতো নিষিদ্ধ অ্যাপ রয়েছে কি না তাও দেখছে।

বেইজিংয়ের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী ফরাসি সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমিসহ আমার পাঁচ বন্ধুকে পুলিশ থেকে ফোন করা হয়েছে। তারা আমাদের অবস্থান জানতে চাচ্ছিল। ’

বিবিসি বলছে, ফোন কলের পর একজন পুলিশ অফিসার ওই নারীর এক বন্ধুর বাড়িতে হাজির হয়। তারা বিক্ষোভস্থলে গিয়েছিল কি না তা জিজ্ঞাসা করেন ওই পুলিশ অফিসার। বিক্ষোভকে একটি অবৈধ সমাবেশ আখ্যা দেন ওই পুলিশ অফিসার।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের পরিচয় কীভাবে শনাক্ত করছে চীনা পুলিশ তা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।  

সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করা কয়েকজন সাংবাদিককে আটক করেছে চীনা পুলিশ। লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের এক সংবাদ দাতাকে আটক করা হয়েছিল ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সাংহাইতে একটি বিক্ষোভ কভার করার সময় বিবিসির সাংবাদিক এড লরেন্সকেও কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক আটক অগ্রহণযোগ্য। ’

এ দিকে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে ফুটেজ কিংবা ছবি নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে শি প্রশাসন। ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলতে কিংবা মানুষ যাতে না দেখতে পারে সে জন্য ব্যাপক আকারে সেন্সর করা হচ্ছে।

news24bd.tv/মামুন

এই রকম আরও টপিক