১০ ডিসেম্বর সমাবেশ কি বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সঙ্গে বিএনপির সংহতি প্রকাশ, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

১০ ডিসেম্বর সমাবেশ কি বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সঙ্গে বিএনপির সংহতি প্রকাশ, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ  বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার দিন ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করে বিএনপি কি বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে চায়?’ 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার দিন বিএনপির সমাবেশ কেন’ শীর্ষক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।  

ড. হাছান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে এ দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায়, যাদের পরবর্তীতে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ এ দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়।

১০ ডিসেম্বরকেই বিএনপি কেন সমাবেশের জন্য বেছে নিল সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ’ 

তবে এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ১০ ডিসেম্বরকে তাদের সমাবেশের তারিখ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের অনেকেই এখন বিএনপি নেতা এবং যে জামায়াতে ইসলামের মূল নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল, তারা হচ্ছে তাদের জোটের প্রধান সহযোগী। ক’দিন আগে বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- ‘পাকিস্তানই ভালো ছিল’। দলের যে মহাসচিব এ কথা বলেন, তাদের আসলে এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

সুতরাং তারা নিজেরা হত্যাকারী এবং আবার নতুনভাবে হত্যাকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্যই তারা ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে। ’ 

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করতে এত অনীহা। কারণ, তারা তো পাকিস্তানের দোসর। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের জায়গার চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেখানে শিশু পার্ক বানিয়েছিলেন। সে জন্য তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে চায় না। অথচ আমাদের সরকার তাদের সুবিধার্থে, তারা যাতে বেশি লোক সমাগম করতে পারে, সে জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেছে, তাদের প্রস্তুতির জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ থেকে ৬ ডিসেম্বর এগিয়ে এনেছে। ’ 

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সারাদেশে বিএনপি মাঠে সমাবেশ করেছে আর ঢাকা শহরে আসার পর আর মাঠ ভালো লাগে না। তারা চায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে। যেখানে ৩০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি লোক ধরে না; অর্থাৎ তাদের সমাবেশে মানুষ হবে না এটি একটি ভয়। আরেকটি কারণ হচ্ছে রাস্তায় সমাবেশ করলে গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করা যাবে, প্রয়োজনমতো অগ্নিসংযোগ করা যাবে, শহরে গণ্ডগোল করা যাবে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যাবে। ’ 

কিন্তু আওয়ামী লীগ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের সেই কাজ করতে দেবে না উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ থেকে ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাসীদের জড়ো করে এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লাইসেন্স তাদের দেওয়া হবে না। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাদের কর্মীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের উসকানিমূলক বক্তব্যে আমাদের কর্মীদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকবে। প্রয়োজনে আগে থেকে থাকবে। ’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সরকার সহযোগিতা করছে বিধায় বিএনপি সারাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারছে, কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুঁড়ে আমাদের নেত্রীকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল, ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হেলাল এমপির জনসভায় হামলা চালিয়ে এক ডজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, কিবরিয়া সাহেব এবং আহসান উল্লাহ মাস্টারের জনসভায় হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, শতশত মানুষকে আহত করা হয়েছিল, খুলনার মঞ্জুর ইমামসহ অনেককে তারা হত্যা করেছে এবং আমরা যখন পার্টি অফিসের সামনে কোনো সমাবেশ করতাম তখন তারা দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাখতো। এমনকি ধানমন্ডিতে এই রাসেল স্কোয়ারে আমাদের প্রয়াত নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে পুলিশ পিটিয়েছিল, দেশের জ্যেষ্ঠ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মতিয়া আপাকে টানা হেঁচড়া করেছিল। কই তাদের কোনো নেতাকে তো এমন করা হয়নি, তাদের কোনো সমাবেশে তো পটকাও ফোটেনি। ’ অতএব, সরকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের অপচেষ্টা করে সরকারকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না, সরকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে কঠোর হস্তে  দমন করবে, উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো ঐক্যের ভিত্তিতে সমস্ত অপশক্তিকে আমরা রুখে দেবো, এই বাংলাদেশে আগুনসন্ত্রাসীদের রুখে দেবো। ’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম এর সভাপতিত্বে জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নিজামুল হক ভূঁইয়া, শহীদ বুদ্ধিজীবীকন্যা অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবীকন্যা শমী কায়সার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও কৃষক লীগের সিনিয়র সহ-সভাতি শেখ জাহাঙ্গীর আলম।  

আয়োজক জোটের সহ-সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল এবং অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, চিত্রনায়িকা রোজিনা ও অরুণা বিশ্বাস, অভিনেত্রী তানভীন সুইটি, জোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লায়ন মুহাম্মদ মীযানুর রহমান, তথ্য গবেষণা সম্পাদক আশরাফুজ্জামান মিতু মাদবর, অভিনেতা রাজ সরকার, অভিনেত্রী পারুল আক্তার লোপা, কণ্ঠশিল্পী তরঙ্গ ডেইজী, মুনা চৌধুরী প্রমুখ এ সময় বক্তব্য দেন।

news24bd.tv/ইস্রাফিল