রামোস ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সুইজারল্যান্ড, কোয়ার্টারে পর্তুগাল

সংগৃহীত ছবি

রামোস ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সুইজারল্যান্ড, কোয়ার্টারে পর্তুগাল

অনলাইন ডেস্ক

মহাগুরুত্বপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে শুরুর একাদশে নেই পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার বদলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ২১ বছরের এক তরুণ; গনসালো রামোস যার নাম। তবে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর বিশ্বকাপের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন এই তারুণ। এক ম্যাচেই বনে গিয়েছেন আগামীর তারকা।

একাদশে সুযোগ পেয়ে হ্যাটট্রিক করে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রেখে ভেঙে দিয়েছেন বহু রেকর্ড।

ম্যাচের ১৭, ৫১ ও ৬৭ মিনিটে তিনটি গোল করেন বেনফিকার এই তারকা। আর তাতেই রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে গেছে তার। রোনালদো তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যা পারেননি প্রথম ম্যাচেই তা করে দেখিয়েছেন রামোস।

দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাচের শুরু থেকেই। তার হ্যাটট্রিকে সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে পর্তুগাল। সুইসরা এদিন ম্যাচ হেরে গেছে মূলত এক রামোসের কাছেই। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক এটি।

চলতি বছর এ নিয়ে তৃতীয়বার দেখা হলো পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডের। যেখানে আগের দুই দেখায় সমানে সমান ছিল তারা। তবে সবশেষ ম্যাচে রোনালদোর জোড়া গোলে লিসবনে ঘরের মাঠে সুইসদের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয় তুলেছিল পর্তুগিজরা। আর সেই রোনালদোকেই কিনা বেঞ্চে বসিয়ে ম্যাচ শুরু করে ফার্নান্দো সান্তোস। অতি সাহসী না হলে এমন সিদ্ধান্ত কেউ নেই? 

কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন রামোসও। মাঠে নেমেই জাত চিনিয়েছেন এই তরুণ। ম্যাচের ১৭ মিনিটে তার পা থেকেই আসে প্রথম গোল। এরপর কেবলই একের পর এক কীর্তি গড়ে কিংবদন্তিদের ছাড়িয়ে যাওয়া। বিশ্বকাপের নকআউটে পর্তুগালের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ডও গড়েছেন ২১ বছর ১৬৯ দিন বয়সী রামোস। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে গোল করে রেকর্ডটি (২৪ বছর ১৭৯ দিন) এত দিন দখলে রেখেছিলেন পর্তুগিজদের সাবেক কিংবদন্তি ইউসেবিও।

এদিন হ্যাটট্রিক করে ২০ বছরের পুরনো এক বিশ্বকাপ স্মৃতিও মনে করিয়ে দিয়েছেন রামোস। ২০০২ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। এর ৪ বিশ্বকাপ পর এসে সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটান রামোস। এই গোলে পেলের পাশেও এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ব্রাজিল কিংবদন্তির পর বিশ্বকাপ নকআউটে তার চেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক নেই দ্বিতীয় কারো।

রামোসের দিনে রেকর্ড হয়েছে আরো একটি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে এদিন গোল করেছেন পর্তুগালের আরেক তারকা পেপে। ৩৯ বছর ৯ মাস বয়সে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।

এদিন শুরু থেকেই সুইসদের চেপে ধরে পর্তুগাল। যার শুরুটা করেন রামোস। ম্যাচের ১৭ মিনিটে জোয়াও ফেলিক্সের বাড়ানো বলে দলকে লিড এনেদেন রামোস। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে সেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পেপে। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সুইসরা।

দ্বিতীয়ার্ধে নেমে আক্রমণের ধারা আরও বাড়ায় পর্তুগাল। সেই আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন রামোস। ৫১ মিনিটে তার গোলে আবারও লিড নেয় পর্তুগাল। খানিক পর রাফায়েল গুয়েরেইরো পেয়েছেন গোলের দেখা। তার গোলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০। এরপর এক গোল শোধ দেয় সুইসরা। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ম্যানুয়েল আকানজি। এরপর ৬৭ মিনিটে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন রামোস। দারুণ গোলে ব্যবধান ৫-১ করেন এই তরুণ।

পর্তুগালের গোল উৎসবের দিনে শরিক হতে পারতেন রোনালদোও। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে রামোসকে বসিয়ে রোনালদোকে মাঠে নামায় সান্তোস। তবে এদিনও হতাশ করেছেন রোনালদো। গোল উৎসবের দিনেও গোল বঞ্চিত থাকতে হয়েছে তাকে। ম্যাচের অতিরিক্ত যোগ করা সময়ের দুই মিনিটের মাথায় সুইস কঠিনে শেষ পেরেক ঠুকেন রাফায়েল লিও। আর তাতেই বিদায় নিশ্চিত হয় সুইসদের। অন্যদিকে পর্তুগাল উঠে যায় পরের রাউন্ডে। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাত ৯টায় মরক্কোর বিপক্ষে মাঠে নামবে পর্তুগাল।
 

news24bd.tv/আমিরুল