সালাম না দেওয়ায় কিশোর গ্যাং 'মামা-ভাইগ্না' গ্রুপের হামলা, আহত ৪

ফাইল ছবি

সালাম না দেওয়ায় কিশোর গ্যাং 'মামা-ভাইগ্না' গ্রুপের হামলা, আহত ৪

সাভার প্রতিনিধি

সাভারে সালাম না দেওয়ায় অনার্স পড়ুয়া ছাত্র তন্ময় শাহিনের ওপর হামলা চালিয়েছে কিশোর গ্যাং মামা-ভাইগ্না গ্রুপের সদস্যরা। হামলায় কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিনসহ আরো চারজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন তালতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার এসআই মো. রাজু আহমেদ।

 

আহতরা হলেন, সাভার সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় শাহিন, মুছা এহসান মুন্না, আব্দুল করিম ও মো. ইয়াছিন। তারা বর্তমানে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, মুছা এহসান মুন্না, আব্দুল করিম ও মো. ইয়াছিন হামলা থেকে কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিনকে বাঁচাতে গেলে তাদের উপরও হামলা চালিয়ে আহত করে কিশোর গ্যাং মামা-ভাইগ্না গ্রুপ। কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিন গুরুতর আহত হয়ে এখন শয্যাশায়ী।

মঙ্গলবার রাতে সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন তালতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কিশোর গ্যাং সদস্যদের মহড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল পুরো এলাকায়। জরুরী পরিষেবা ৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশি তৎপরতায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।  

এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এতে ওসমান মাদবরের ছেলে মো. শহীদ (৪২), মো. মুন্না ওরফে কবুতর মুন্না (২৪), মো. হিমেল (২৫), সাহামতের ছেলে মো. রফিক (৪০), কাসেম ঢালীর ছেলে বাবুল (৪০), মো. শরীফ (২২) ও মো. রোহানসহ (১৯) অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত কিশোর গ্যাংয়ের দুইটি গ্রুপের মধ্যে মামা গ্রুপের লিডার হলেন মুন্না ওরফে কবুতর মুন্না (২৪) এবং ভাইগ্না গ্রুপের লিডার হলেন মো. হিমেল ওরফে হিরু। তারা সম্পর্কে আপন মামা-ভাগিনা। তাদের দুই গ্রুপে প্রায় দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানা ও বিভিন্ন থানায় হত্যা, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।  

অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিন সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এর ৩০ মিনিট পর চাঁপাইন নিউমার্কেট রোডের ফ্রেন্স টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে তার গতিরোধ করে সেখানে আড্ডারত মামা ভাইগ্না গ্রুপের ৩৫/৪০ জন সদস্যরা। এসময় তাকে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করতে থাকে তারা। কথা বলার সময় ওই গ্রুপের সদস্য মো. শরীফকে সালাম না দেওয়ায় তাকে চর থাপ্পর, কিল-ঘুষি ও ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। রক্ষা পেতে এক পর্যায়ে শাহীন দৌড় দেয়। চাঁপাইন তালতলা এলাকায় পৌঁছালে তার উপর দ্বিতীয় দফায় সশস্ত্র হামলা করে অভিযুক্তরা। এসময় স্থানীয় মুছা এহসান মুন্না, আব্দুল করিম ও মো. ইয়াছিন হামলা থেকে কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিনকে বাঁচাতে গেলে তাদের উপরও হামলা চালিয়ে আহত করে কিশোর গ্যাং মামা-ভাইগ্না গ্রুপের সদস্যরা। পুলিশে খবর দিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা জানায়, আমার বাসার পাশে হঠাৎ শোরগোল আর চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পেলে বাহিরে এসে দেখি ৫০/৬০ জন উঠতি বয়সি ছেলেরা মিলে একটি ছেলেকে বেধরক কিল-ঘুষি দিচ্ছে। বিয়ষটা দেখে তৎক্ষণাৎ কিশোরগুলোকে থামাতে গেলে মো. হিমেল ও কবুতর মুন্না নামে দুইটি ছেলে আমার কলার চেপে আক্রমণ করে। এসময় এলাকাবাসী এসে তাদের ছত্র ভঙ্গ করে দিলে তারা পালিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, আমি যদি তাদের না ঠেকাতাম তাহলে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে পারতো। এরা কিশোর গ্যাং গ্রুপ বানিয়ে প্রায়ই এলাকায় মারামারি করে। প্রশাসন শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এরা বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাবে।

আহত কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিন জানায়, সালাম না দেওয়ায় তারা এলাকার বড় ভাইকে চিনিয়ে দিতে আমাকে রোডের পাশের একটি চিপা গলিতে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে ইচ্ছামত কিল-ঘুষি মারতে থাকে। প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে পালাতে গিয়েও পিছু নেয় ওরা। আমি তালতলায় পৌঁছালে আবার সুইচ গিয়ার দিয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি জখম করে। এরপর যে বাড়িতে আশ্রয় নিতে গিয়েছি সে বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। পাশের বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ থাকতে পারে।

এদিকে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীকে মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাজী না হওয়ায় রাতে অভিযুক্তরাও সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।  

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মারামারির ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।