রুদ্ধশ্বাস জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের 

সংগৃহীত ছবি

রুদ্ধশ্বাস জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের 

অনলাইন ডেস্ক

এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। আজ বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতকে ৫ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে লিটন দাসের দল।

মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ জয়ের জন্য ভারতকে ছুঁড়ে দিয়েছিল ২৭২ রানের লক্ষ্য। সেই রান তাড়ায় নেমে ভারত শুরুতে ছিল ভীষণ চাপে।

এরপর শ্রেয়াস আইয়ার এবং অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত।  শেষদিকে রোহিত শর্মার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ভারত জাগিয়েছিল জয়ের সম্ভাবনাও। তবে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশই। ভারতকে ২৬৬ রানে থামিয়ে দিয়ে সিরিজ জয়ের আনন্দে মাতে লিটন-সাকিবরা।

আঙুলের চোটে রোহিত শর্মা ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ৯-এ। তিনি নেমেই ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন ম্যাচের মোড়। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মুখের জয় প্রায় কেড়েই নিচ্ছিলেন তিনি। শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২০ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে দুই চার, এক ছক্কায় মেরে শেষ বলে তিনি সমীকরণ এমন করে দেন-এক ছয়ে ম্যাচ জিতবে ভারত। তবে শেষ বল ডট নেন ফিজ। তাতে সিরিজ খোয়ায় ভারত।  

রান তাড়ায় নেমে ভারত দ্বিতীয় ওভারেই হারায় রোহিতের জায়গায় ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা বিরাট কোহলিকে। মিরাজকে চার মেরে ইনিংস শুরু করা কোহলি পরের ওভারে এবাদতের শর্ট লেংথের বলটা পুল করতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হন। ফেরেন মাত্র ৫ রানে। পরের ওভারে ধাওয়ানকেও হারায় ভারত। তৃতীয় ওভারে পঞ্চম বলে মুস্তাফিজের ছোড়া স্লো বাউন্সারে ভড়কে যান ভারতের ওপেনার। ৮ রান করা ধাওয়ান ক্যাচ দেন পয়েন্টে। মিরাজ সেই ক্যাচ লুফে নিলে ১৩ রানেই ২ উইকেট হারায় ভারত।

শুরুতে দুই ওপেনারকে হারানো ভারতকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে ওয়াশিংটন পাওয়ারপ্লের শেষ বলে সাকিব আল হাসান বলে ক্যাচ দেন শর্ট মিড-উইকেটে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসকে। লেগ সাইডে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ধীরগতির স্পিনে বোকা বনে যান ওয়াশিংটন।

উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া আইয়ারের সঙ্গে একটা জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছিলেন লোকেশ রাহুল। তবে ১৯তম ওভারের তৃতীয়  বলে রাহুলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মিরাজ। তার নিচু হওয়া বলটা আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি রাহুল। প্যাডে আঘাত করে বল। মিরাজের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন মাসুদুর রহমান মুকুল। ৬৫ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত।

এরপরই শুরু ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো। পঞ্চম উইকেট জুটিতে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ১০৭ রানের জুটি গড়ে ইনিংস মেরামত করেন আইয়ার। অবশ্য তার ফেরাতেই ভাঙে এই জুটি। সেঞ্চুরির পথে থাকা আইয়ারকে ফেরান মিরাজ। ওভারে এক ছক্কা হাঁকানোর পর মিরাজকে আবারও তুলে মারতে গিয়ে  ডিপ মিড-উইকেটে আফিফকে ক্যাচ দেন ৮২ রান করা আইয়ার।  এরপর ফিফটি তুলে নিয়ে বিদায় নেন অক্ষরও (৫৬ রান)। তাকে ফেরান এবাদত।

এরপর দ্রুতই শারদুল ঠাকুর (৭ রান) এবং দীপক চাহার (১১ রান) বিদায় নিলে জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু রোহিত শর্মা ম্যাচে রেখেছিলেন ভারতকে। ৪৬তম ওভারে ভারত পায় ১৮ রান। এরপর ৪৯তম ওভারে আসে ২০ রান। শেষ ওভারেও রোহিতকে করতে হতো এই ২০ রান। তবে অনেক চেষ্টা করেও সেই সমীকরণ আর মেলাতে পারেননি ভারত অধিনায়ক।

এর আগে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ লড়াকু পুঁজি পায় মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহর রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে। মাত্র ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের এক শ ছোঁয়াই যখন দুরূহ ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখনই বিপর্যয় সামাল দিতে দাঁড়িয়ে যান মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ। গড়েন ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি। মিরাজ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তার প্রথম সেঞ্চুরি।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের মুখ থেকে জয় কেড়ে নেয় বাংলাদেশ এই মিরাজের বীরত্বেই। কঠিন চাপের মুখ থেকে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে দলকে জেতান তিনি। আজও মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে আসেন, তখন কাঁপছে বাংলাদেশ। মাত্র ৬৯ রানেই নেই পরীক্ষিত ব্যাটাররা। ওই অবস্থায় নিজেকে হারিয়ে খোঁজা মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়লেন জুটি। ইনিংস শেষ হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন বটে, তবে মিরাজ থামেননি। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলেই মাঠ ছাড়েন তিনি। ৮৩ বলে ৮ চার আর ৪ ছক্কার মারে শতরানের মাইলফলকে পৌঁছান মিরাজ।

শেষ উইকেট জুটিতে লেজের সারির ব্যাটার নাসুম আহমেদকে নিয়ে মিরাজ স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫৪ রান। এতে অবদান ছিল নাসুমেরও। ১১ বলে ১৮ রান করেন তিনি। এর আগে, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি গড়ে দলকে বাঁচান মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে যা সর্বোচ্চ। মাহমুদউল্লাহ ফেরার আগে করেন ৭৪ রান। ৭৪ বলেই আবার ফিফটি করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এটা মাহমুদউল্লাহর ২৭তম ফিফটি।

মাহমুদউল্লাহর পরে নামলেও তার আগেই ফিফটি তুলে নেন মিরাজ। ৫৫ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। এরপর আরও বাড়ান রান তোলার গতি। মিরাজ প্রথম পঞ্চাশ থেকে পরের পঞ্চাশে যেতে খেলেন আর মাত্র ২৮ বল! ইনিংসের শেষদিকে মিরাজ-নাসুমের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রানের গতি রীতিমতো দৌড়াচ্ছি। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ৭০ রান।

মিরাজ-মাহমুদউল্লাহয় ঘুরে দাঁড়ানোর আগে বাংলাদেশের শুরুর দিকের ব্যাটিং ছিল হতাশাময়। ভারতের বোলাররাও করেছেন দারুণ বোলিং। তাতে টস জিতে লিটন দাসের ব্যাটিং নেওয়া প্রশ্নবিদ্ধও হতে শুরু করে। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় ১১ রানে। মোহাম্মদ সিরাজের ভেতরে ঢোকা বলে লেফ বিফোরের ফাঁদে পড়ে দলীয় স্কোরের সমান রানে বিদায় নেন এনামুল হক বিজয়। ভারতকে দ্বিতীয় সাফল্যও এনে দেন সিরাজ। এবার দারুণ এক ডেলিভারিতে ৭ রান করা লিটন দাসকে বোল্ড করেন তিনি।

সাকিব আল হাসান হাল ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে শুরু থেকেই ভারতীয় পেসারদের তোপ সামলাতে পারছিলেন তিনি। কখনো সিরাজ, কখনো উমরান-সাকিবকে উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগ দিচ্ছিলেন না কেউ। বাউন্সে রীতিমতো কাবু করে ফেলেন সাকিবকে। সেই সাকিব উইকেট দেন স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরকে। মারতে গিয়ে ৮ রানে বিদায় নেন তিনি। সাকিবের আগে উমরান মালিকের ঘণ্টাপ্রতি ১৫১ কিলোমিটার গতিতে ছোড়া বলে ক্লিন বোল্ড হন ২১ রান করা শান্ত।  

সাকিব বিদায় নেওয়ার পর আর তিন রান যোগ হতে ফেরেন মুশফিকুর রহিম এবং আফিফ হোসেনও। মুশফিক তাও দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছেন (১২ রান), কিন্তু আফিফ রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। ওয়াশিংটন পরপর দুই বলে ফেরান এই দুই ব্যাটারকে। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেটে পেয়েছেন ওয়াশিংটনই। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন উমরান এবং সিরাজ।

news24bd.tv/সাব্বির