বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মানুষের ঢল

সাফারি পার্কে মানুষের ঢল

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মানুষের ঢল

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ঈদের তিনদিন পার হলেও ভিড় কমেনি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। প্রশান্তির খোঁজে নগরের মানুষগুলো এখনো ছুটছেন এদিকে-ওদিকে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে। আর তাই এখনো গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক লোকে লোকারণ্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকছে এশিয়ার বৃহত্তর এই সাফারি পার্ক।

ঈদের পর গত তিনদিন সাফারি পার্কে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে বলে জানা গেছে। বেলা যতো বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ততোটাই বেড়ে যায়।

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন পার্কের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ-শিশু থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসছে এখানে।

শুধু দেশের নয়, এখানে বিদেশি পর্যটকদেরও আসতে দেখা যাচ্ছে। এবারের ঈদে ছুটি কম থাকলেও প্রকৃতিপ্রেমিদের যেন এখনও ছুটি শেষ হয়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে সাফারি পার্কে প্রাণি ও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। এর মধ্যে কোর সাফারি পার্কের অংশে ছিলো সবচেয়ে বেশি ভিড়। সেখান থেকে চারটি বাস ও দুটি জিপে চড়ে নির্ধারিত মাঠে থাকা উম্মুক্ত বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফসহ বিভিন্ন জন্তু দেখছেন দর্শনার্থীরা। তবে সাফারি পার্কে প্রবেশে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে আগত দর্শনার্থীদের পক্ষ থেকে।

অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার পাশে গাজীপুরে রয়েছে অর্ধ শতাধিক বেসরকারি রিসোর্ট। আর এসব রিসোর্টেও এবারের ঈদের ছুটিতে বিনোদনপ্রেমিরা বেড়াতে যান। রিসোর্টগুলোতে ঈদের আগেই সবগুলো কক্ষ বুকিং ছিলো বলে জানা গেছে। তারপরও বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় জমান এসব রিসোর্টে।

বঙ্গবন্ধু পার্কের দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক পার হয়েই বিশাল মাঠ। সারি সারি ফুল গাছ। তারপরই কচ্ছপের জলধারা। অসংখ্য কচ্ছপ নিরাপদে খেলা করছে জলে এবং ডাঙায়। পার্কে রয়েছে- পশুচারণভূমি, বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ, কোর সাফারী, সাফারী কিংডম, বায়োডাইভারসিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারী, বাঘের আস্তানা, সিংহের আস্তানা, চিত্রা হরিণ, কালো ভাল্লুকু, সাম্বার হরিণ ও জলহস্তির আস্তানা। রয়েছে ডরমেটরি, বন্যপ্রাণি হাসপাতাল, ঝুলন্ত সেতু, ন্যাচারালহিস্ট্রি, পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, গুইসাপ পার্ক, ফেন্সি কার্প পার্ক, ক্রাউন ফিজেন্ট পাখিশালা, পেলিকেল পাখির জলাধার, অতিথি পাখির জলাধারা, বার্ডশো গ্যালারী, অর্কিড হাউজ, ফোয়ারা, প্রজাপতি, পেঁচা ও শকুনের আস্তানা, ক্যাঙ্গারু গার্ডেন, হাতি গ্যালারি, লেক ও জলাধার ইত্যাদি। প্রকৃতির সমন্বয়ে গড়ে তোলা এ পার্কে দর্শনার্থীরা এসব দেখছেন দূর-দূরান্ত থেকে এসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের তিনদিন পেরুলেও এখনো বিনোদনপ্রেমি মানুষের ভিড় কমেনি। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মূল ফটকে আগত দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করছে। একটু বেলা বাড়লেই আর মিলছে না গাড়ি পার্কিং করার জায়গা। অন্যান্য সরকারি ছুটির চেয়ে এবারের ঈদে যেন বেশি ভিড় জমেছে সাফারি পার্কে।

এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত পশু-পাখির প্রাকৃতিক সংগ্রহশালার উম্মুক্ত প্রান্তরে বিচরণশীল পাখির কলরব ও বিভিন্ন পশুর হাঁক-ডাকে দর্শনার্থীরা বিমোহিত।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের পরের দুই দিনের চেয়ে শনিবার ছিলো দর্শনার্থীদের বেশি ভিড়।

তিনি বলেন, সাফারি পার্কে বড় বড় বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, জিরাফ রয়েছে। এছাড়া মরুভূমির প্রাণি উটপাখি, ক্যাঙ্গারু, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দর্শকদের মোহিত করে। কোর সাফারি অংশে দর্শকদের অপেক্ষমাণ দীর্ঘ সারি থাকলেও সেখানে গাড়ি সংকট রয়েছে। সেখানে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকলে লম্বা সারিতে দর্শকদের দাড়িয়ে কষ্ট করতে হত না।

তিনি আরও বলেন, এবারের ঈদে দর্শনার্থীদের এতো চাপ পড়বে তা আগে থেকে আচ করতে পেরেছিলাম। তাই অতিরিক্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গাজীপুরের ভাওয়াল গড়ের সরকারি তিন হাজার ৪০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি। ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নীচু ভূমিসমৃদ্ধ শালবন, আমলকি, বহেরা, হরিতকি, কড়ই, পলাশ, চাপালিশসহ নানা গাছগাছালি আর হরেক লতাগুল্মে ভরা।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুল হাই নান্না জানান, শনিবার ঈদের ছুটি শেষ দিন। রবিবার থেকে ব্যাংক খুলছে। সারা বছর ব্যাংকের কাজে একগুয়েমি লাগে। তাই একটু বৈচিত্র আনতেই অফিস খোলার একদিন আগে শনিবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাফারি পার্কে উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক ঘুরে দেখলাম। খুব ভাল লেগেছে। খুবই আনন্দ পেয়েছি।

পুবাইল থেকে আগত নাসরিন বেগম বলেন, অনেক সুন্দর একটি জায়গা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এভাবে খোলামেলা বনের হিংস্র কোনো প্রাণি আগে দেখিনি।

যাত্রাবাড়ি থেকে আসা ব্যবসায়ী শামীম জানান, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্নজনের কাছে সাফারি পার্ক সম্পর্কে শুনেছি। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল সাফারি পার্কে আসার। আজ পূর্ণ হলো। অনেক ভিড়ে কষ্টের মধ্যেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক প্রাণি, পাখি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। এখানে কোন বখাটের উৎপাত নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

সাফারি পার্ক ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই মোকাম্মেল হোসেন জানান, এক সময় সাফারি পার্কে দর্শনার্থীরা নিরাপত্তহীনতার মধ্যে থাকলেও সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে এখন আর নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যা নেই। পার্কে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্যুরিস্ট পুলিশ দর্শনার্থীদের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন।

শিবপুরের ইয়াসিন জানায়, যেহেতু এটি সরকারি পার্ক। তাই এখানে দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য কম হওয়া উচিত।

সম্পর্কিত খবর