পেরুর ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় দেবে মেক্সিকো

সংগৃহীত ছবি

পেরুর ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় দেবে মেক্সিকো

অনলাইন ডেস্ক

অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত পেরুর সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোকে মেক্সিকো সরকার আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।  

গত বুধবার নাটকীয়ভাবে পেরুর পার্লামেন্ট অভিশংসনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেয় পেদ্রো কাস্তিলোকে। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫৩ বছর বয়সী পেদ্রো এখন পেরুর রাজধানী লিমায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। ইতিমধ্যে মেক্সিকোতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। পেদ্রোর আবেদনটি তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়েছে।  

মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্ড জানিয়েছেন, দুই দেশ এখন তাঁর আশ্রয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে।

ইতিমধ্যে পেরুতে নিযুক্ত মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত পাবলো মনরয় লিমাতে কাস্তিলোর সঙ্গে দেখা করেছেন।  

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোরকে একটি চিঠি লিখেছেন পেদ্রো কাস্তিলো। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, চিঠিতে বিচার বিভাগের ভিত্তিহীন নিপীড়নের মুখে পেদ্রোকে মেক্সিকোয় আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করা হয়েছে।  

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘পেদ্রো কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি। শুধু তাঁর নিজের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করার অপরাধে তারা তাঁর বিচার করতে চায়। ’ 

গত বুধবার পেদ্রো কাস্তিলোকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের পরে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন দিনা বোলুয়ার্তে। এর মাধ্যমে পেরু প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। দিনা বোলুয়ার্তে পেরুর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।  

এর আগের দিন মঙ্গলবারে পেদ্রো কাস্তিলো বলেছিলেন, তিনি কংগ্রেসের পরিবর্তে একটি ‘ব্যতিক্রমী জরুরি সরকারের মাধ্যমে’ দেশ পরিচালনা করবেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বোলুয়ার্তেসহ অন্যান্য সংসদ সদস্য। তাঁরা জরুরি বৈঠক করে প্রেসিডেন্ট কাস্তিলোকে অপসারণ করেন। এরপর তাঁকে আটক করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা হয়।  

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দিনা বোলুয়ার্তে তাঁর বক্তৃতায় পেরুর নাগরিকদের জাতীয় ঐক্যের জন্য একজোট হওয়ার আহ্বান জানান এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাজনৈতিক যুদ্ধবিরতি চান।  

বিবিসি জানিয়েছে, পেদ্রো কাস্তিলো গত বছরের জুনে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তারপর থেকে তিনি অন্তত তিনবার কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কাস্তিলোকে অপসারণের ঘটনার সূত্রপাত গতকাল বুধবার। তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, তিনি কংগ্রেস ভেঙে দেবেন এবং জরুরি সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করবেন। তাঁর এমন ঘোষণায় অনেকেই হতবাক হয়েছেন। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগও করেন। পেরুর সাংবিধানিক আদালতের প্রধান কাস্তিলোর বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানচেষ্টার’ অভিযোগ করেন।  

পেরুর কংগ্রেস কাস্তিলোর বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত। তারা জরুরি অধিবেশন ডাকে এবং অভিশংসন ভোটের মাধ্যমে কাস্তিলোকে প্রতিরোধ করে। কাস্তিলোকে অপসারণের পক্ষে ১০১টি ভোট পড়ে। মাত্র ছয়টি ভোট বিপক্ষে পড়ে এবং ১০ জন কংগ্রেস সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন।  

পেরু একটি কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে পাঁচজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছিল পেরু।

news24bd.tv/মামুন