বিশ্বকাপ শেষ ব্রাজিলের, হাসলো ক্রোয়েশিয়া

সংগৃহীত ছবি

বিশ্বকাপ শেষ ব্রাজিলের, হাসলো ক্রোয়েশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

ক্রোয়াট রক্ষণভাগের ফুটবলারদের নাচিয়ে দারুণ গোলে কিংবদন্তী পেলেকে স্পর্শ করলেও হাসতে পারেনি নেইমার। ডুবতে থাকা ক্রোয়াটদের রক্ষা করে ব্রাজিল সমর্থকদের হাসি কেড়ে নেন ব্রুনো পেটকোভিচ। তার গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। জন্ম হয় নাটকীয়তার।

টাইব্রেকে গড়ায় ম্যাচের ভাগ্য। যেখানে ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে ম্যাচের নায়ক ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ।  

ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম শটটি নিতে আসেন নিকোলা ভ্লাসিচ। গোল করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।

অন্যদিকে ব্রাজিলকে সমতায় আনতে প্রথম শট নিতে আসেন রুদ্রিগো। কিন্তু তার নেওয়া প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। ম্যাচ জিততে একটি গোল ঠেকাতে হতো আলিসন বেকারকে। পারেননি তিনি। উল্টো দলকে সমতায় ফেরাতে এসে গোল বঞ্চিত থাকেন মারকুইনহোস। তার নেওয়া শটটি ফিরে আসে গোল পোস্টে বাধা পেয়ে। আর তাতেই বিদায় নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের। ৪-২ গোলে বিদায় নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের। বিপরীতে সেমিতে পা রাখে ক্রোয়েশিয়া।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে বেশকবার আক্রমণে গিয়েছে ক্রোয়াটরা। তবে সাফল্যের মুখ দেখেনি সেই আক্রমণ। উল্টো ম্যাচের ১০৬ মিনিটে নেইমারে কেঁপে উঠে ক্রোয়াট রক্ষাপ্রচীর। গোল করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ডুবতে থাকা ব্রাজিলকে পথ দেখান পিএসজি ফরোয়ার্ড। এখানেই শেষ হতে পারতো গল্পটা। হেক্সা জয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখতে পারত ব্রাজিল। তবে পেটকোভিচের গোলে অপেক্ষা বাড়ে ব্রাজিলের। স্তব্ধ হয়ে যায় গ্যালারি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকে।

এর আগে, প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র’য়ে থাকা ম্যাচ দ্বিতীয়ার্ধেও দেখেনি ফল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র’য়ে শেষ হয় ক্রোয়েশিয়া-ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ব্রাজিলের বেশকিছু আক্রমণ প্রতিহত করে তিতের দলকে গোল বঞ্চিত রাখে ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। তার নৈপুণ্যেই ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে সেখানে আর নেইমারকে রুখতে পারেননি লিভাকোভিচ। শেষটাই নেইমারের কাছে পরাস্ত হতে হয় তাকে। তবে ক্রোয়াটদের উদ্ধার করেছেন পেটকোভিচ।

প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র’য়ের পর দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আক্রমণে যায় ব্রাজিল। কাঁপিয়ে দেয় ক্রোয়াটদের রক্ষণভাগ। ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি আক্রমণ প্রতিহত করে দেয় ক্রোয়াটদের রক্ষণভাগ। এসময় নেইমারের শট হাতে লাগে ক্রোয়াট রক্ষণভাগের ফুটবলারের। পেনাল্টি আপিল করে ব্রাজিলের ফুটবলাররা। ভিএরআর চেকে দেখা যায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বল হাতে লেগেছে ক্রোয়াট রক্ষণভাগের ফুটবলারের। পরে পেনাল্টি পায়নি ব্রাজিল। সে যাত্রায় রক্ষা পায় ক্রোয়েশিয়া।

ম্যাচের ৫২ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে বল ক্রস করেন ইভান পেরিসিক। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেনি ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণভাগ। ৫৪ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় ব্রাজিল। বল নিয়ে গোলের উদ্দেশ্যে ছুটে যান নেইমার। সেই আক্রমণে কেঁপে উঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে এ যাত্রায়ও দলের তাত্রা হয়ে ক্রোয়াটদের রক্ষা করেন গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। আরও একবার নেইমারকে প্রতিহত করেন তিনি।

আক্রমণে গতি না আসায়, ম্যাচের ৫৬ মিনিটে রাফিনহার পরিবর্তে অ্যান্টনি ও ৬৪ মিনিটে ভিনিসিয়াসের পরিবর্তে রুদ্রিগোকে নামায় তিতে। ৬৫ মিনিটে গোল করার সেরা সুযোগ পায় ব্রাজিল। গোলরক্ষককে একা পেয়েও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। তিতের আক্রমণভাগকে আরও একবার হতাশ করেন লিভাকোভিচ। নিশ্চিত গোল হজম করা থেকে বাঁচান ক্রোয়াটদের।

৭৫ মিনিটে আরও একবার আক্রমনে যায় ব্রাজিল। নেইমারকে এ যাত্রায়ও পরাস্ত করেন লিভাকোভিচ। ক্রোয়াটদের রক্ষা প্রাচীর হয়ে একাই সামলেছেন ব্রাজিলের একের পর এক কঠিন আক্রমণ। ৭৯ মিনিটে ব্রাজিলকে ঠেকান আরও একবার। একের পর এক আক্রমণের পরও গোল না আসায় ৮৩ মিনিটে রিচার্লিসনকে বসিয়ে পেদ্রোকে নামিয়ে গতি আনার শেষ চেষ্টা চালান তিতে। তবে তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সাফল্যের মুখ দেখেনি তিতের আক্রমণভাগের ফুটবলাররা। গোলশূন্য ড্র’য়ে শেষ হয় ম্যাচটি।

এর আগে, জাপানের বিপক্ষে নড়বড়ে ক্রোয়েশিয়াকে দেখা যায়নি কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শুরু থেকেই বেশ পরিণত ফুটবল খেলেছে ক্রোয়াটরা। আক্রমণে গিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি গতবারের রানার্সআপরা। পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে ব্রাজিলও। তবে ক্রোয়াটদের রক্ষণ দুর্গ ভেদ করতে পারেনি তিতের দল।

শুরু থেকেই আক্রমণে যাওয়া ক্রোয়াটরা গোল করার সেরা সুযোগ পায় ম্যাচের ১৫ মিনিটে। মারিও প্যাসালিকের বাড়ানো বলে গোল করার সুযোগ তৈরি হয় ক্রোয়েশিয়ার। তবে ইভান পেরিসিক ছোঁয়াতে পারেননি পা। ফলে গোল হজম করা থেকে রক্ষা পায় ব্রাজিল।

ম্যাচের ১৯ মিনিটে গোল করার সুযোগ তৈরি হয় ব্রাজিলের। ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগের ফুটবলারদের নাচিয়ে গোল করার সুযোগ তৈরি করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে শেষ পর্যন্ত জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি তিনি। খানিক পরে নেইমারও নিয়ে ছিলেন শট। ক্রোয়াট গোলরক্ষকের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছে তাকেও।

ম্যাচের ২৪ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে ছুটছিলেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার জোসিপ জুরানোভিচ। তবে অবৈধভাবে তার পথ রোধ করেন ব্রাজিল রক্ষণ দানিলো। ফলে হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে তাকে।

৩২ মিনিটে গোল করার সুযোগ আসে ক্রোয়েশিয়ার। তবে সেই সুযোগ লাফিয়ে উঠে বল ঠেকিয়ে পণ্ড করে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসন।

ম্যাচের ৪০ মিনিটে ডি বক্সের ঠিক বাইরে ভিনিসিয়াসের পথ রোধ করে ক্রোয়াটরা। গোল করার সুযোগ পায় ব্রাজিল। বিপদজনক জায়গা থেকে শট নেন নেইমার। তবে খুব সহজেই নেইমারের নেওয়া সেই শট লুফে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। এরপর আর গোল না হলে গোলশূন্য ড্র’য়ে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

news24bd.tv/আমিরুল