১৫ বছর পর ভাইবোনের দেখা!

লেখক বাম থেকে দ্বিতীয়

১৫ বছর পর ভাইবোনের দেখা!

রিমি রুম্মান, যুক্তরাষ্ট্র

সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। জীবন থেকে ১৫টি বছর হারিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

বাবা-মা'র ছায়ায় শৈশব, কৈশোরে ভাইবোনদের মান-অভিমান, খুঁনসুটি আর আহ্লাদে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠে এক চিল্‌তে স্বর্গ। সেই স্বর্গসুখও একসময় পেছনের কালে হারিয়ে যায়।


সময়ের স্রোত ভাইবোনদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক এক দিকে। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে আমাদের ভাইবোনের বিবাদ চরমে গেলে মা ক্ষোভের সাথে বলতেন, এমন এক দিন আসবে যে, কেউ কারো ছায়াও দেখবি না বছরের পর বছর।

তখন এ কথার মানে বুঝিনি। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখলাম, সত্যিই তো! পৃথিবীর এক প্রান্তে আমি, আর অন্য প্রান্তে আমার ভাইবোন।

বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়, আমাদের দেখা হয় না।

ক'টা দিন বোনকে নিয়ে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, নায়াগ্রা ফল্‌স ঘুরে বেড়ানোর চমৎকার এক সময় কাটে আমাদের। ছোট্ট রিহান ফুপিকে আদরে, মায়ায় জড়িয়ে রাখে। চিরদিনের জন্যে তার সাথে নিউইয়র্কে থেকে যাবার আকুতি জানায়। অবুঝ শিশু বুঝে না জীবনের কঠিন বাস্তবতা। চাইলেই কেউ কারো সাথে থেকে যেতে পারে না। সবাইকে তার জন্যে নিয়তির নির্ধারিত স্থানে ফিরে যেতে হয়।

খুব দ্রুতই যেন শেষ হয়ে যায় দুটো সপ্তাহ। যেহেতু আম্মা (শাশুড়ি) রাতভর প্রার্থনা করেন আমাদের সকলের মঙ্গল কামনায়, তাই ভোরের দিকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন।

কিন্তু আজ নির্ঘুম। ছট্‌ফট করছেন কখনো ডানে, কখনো বাঁয়ে। শেষে ধীর পায়ে লিভিং রুমে গিয়ে বসেন। বললেন, অসুস্থ বোধ করছেন। চা, নাস্তা, ওষুধ দিয়ে খেতে দিয়ে বেলকনিতে ইজি চেয়ারটায় বসি সকালের হালকা শীতল বাতাসে। বাবাকে খুব মনে পড়ছে। আমার বিদেশ বিভুঁইয়ে ফিরে আসবার দিনগুলোতে ঠিক এমন করে অসুস্থ বোধ করতেন। সন্তানের সাথে পিতামাতার বিচ্ছেদের দিনগুলোতে সব বাবা-মা'ই হয়তো অসুস্থ বোধ করেন। আম্মাও অসুস্থ বোধ করছেন। কেননা আম্মার কন্যা আজ দেশে ফিরে যাবেন। বিদায়বেলায় মাতা-কন্যা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন দীর্ঘসময়। ঘরের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। আমি বুকের বা পাশে তীব্র ব্যথা নিয়ে অহেতুক ব্যস্ত হয়ে উঠি।

বিদেশ বিভূঁইয়ে আপনজনদের আগমন আমাদের আনন্দিত করে বটে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া শুন্যতা আর মায়াটুকু পোড়ায় খুব, খু-উ-ব।


শুভকামনা সকলকে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর