তামাশায় পরিণত হয়েছে পিসিবি: রমিজ রাজা 

সংগৃহীত ছবি

তামাশায় পরিণত হয়েছে পিসিবি: রমিজ রাজা 

অনলাইন ডেস্ক

হুট করেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রধানের চাকরি খোয়ান রমিজ রাজা। মেয়াদের দুই বছর বাকি থাকতেই তাকে সরিয়ে দেয় দেশটির সরকার। এরপর সেই চেয়ারে বসানো হয়েছে নাজাম শেঠিকে। পিসিবি চেয়ারম্যান হয়ে বোর্ডে ফিরেই আমূল পরিবর্তন আনছেন।

পুরো নির্বাচক কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তন আনা হচ্ছে বোর্ডের গঠনতন্ত্রেও। আর এই পুরো প্রক্রিয়া দেখে রমিজ রাজা বেশ বিরক্ত। নিজের হতাশা প্রকাশ করে তিনি জানালেন, তামাশায় পরিণত হয়েছে পিসিবি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিন বছরের জন্য বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব পান রমিজ। তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে এ পদে বসান। কিন্তু গত এপ্রিলে দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান ক্ষমতা হারালে রমিজের ভবিষ্যৎও শঙ্কায় পড়ে যায়। এ মাসে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তান হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরই তার ওপর কোপ পড়ে। নাজামকে বোর্ড প্রধান করে ১৪ সদস্যের কমিটির অনুমোদন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ।

নাজাম বোর্ডে ফিরেই নতুন নির্বাচক কমিটি গঠন করেন তিনি। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে সরিয়ে প্রধান নির্বাচক করেন শাহিদ আফ্রিদিকে। এছাড়াও নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়ার কথাও এগোচ্ছেন তিনি। চাকরি হারানোর পর এতদিন চুপ থাকলেও, নাজামের বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত দেখে মুখ খুলেছেন রমিজ। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে পিসিবিকে কটাক্ষ করেছেন তিনি।

রমিজ বলেছেন, ‘ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতি মেশানো উচিত নয়। এটা ক্রিকেটারদের খেলা এবং তাদের কাজের জায়গা। কিছু লোক বাইরে থেকে এসেছে, তাদের একজনকে (নাজাম) জায়গা করে দিতে পুরো গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হয়েছিল। পৃথিবীর কোথাও এমন দেখিনি। কিছু করার একটা প্রক্রিয়া আছে। এটা (বোর্ডে বদল) করা হয়েছে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে, যখন দলগুলো পাকিস্তান সফর করছে। ভালো বা খারাপ যেমন কাজই করুক, এরপর প্রধান নির্বাচককে (মোহাম্মদ ওয়াসিম) বদলে ফেলা হলো। সে পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে। তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দেওয়া উচিত। ’

নাজামের নতুন পরিচালনা পর্ষদের ক্রিকেটের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই বলে মনে করেন রমিজ। নিজেদের স্বার্থের জন্য কেবল এই দায়িত্বে আসেন তারা। , ‘সে (নাজাম) রাত সোয়া ২টার দিকে টুইট করল যে, রমিজ দায়িত্ব হারিয়েছে। আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি বিধায় কষ্ট লাগে। এটা এমন যেন সে রক্ষাকর্তা হয়ে এসেছে, খেলাটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এর পেছনের উদ্দেশ্য আমরা জানি। তারা পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে চায়, অন্যথায় ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা কখনো ব্যাটও হাতে নেয়নি। ’

বলাবলি হচ্ছে, প্রধান কোচ হিসেবে মিকি আর্থারকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে নাজামের বোর্ড। এ বিষয় নিয়েও ক্ষিপ্ত রমিজ। তিনি বলেছেন, ‘পুরো সেট-আপ তারা মৌসুমের মাঝে বদলে ফেলল। তারা মিকি আর্থারকে ফিরিয়ে আনছে। সাকলাইন মুশতাকের মেয়াদ এমনিতেই জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যেত। সাকলাইন পঞ্চাশের (৪৯) বেশি টেস্ট খেলেছে, সে একজন কিংবদন্তি। সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে আচরণের এটা কোনো ধরন হতে পারে না। ’

অবশ্য নিজ দায়িত্বে বেশ সফলই ছিলেন রমিজ। তার সময়ে হওয়া দুটি টি২০ বিশ্বকাপের একটিতে সেমিফাইনাল ও অন্যটিতে ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলে দলটি। নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতেন বাবর আজমরা। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দলকে পাকিস্তানে আনেন রমিজ। তবুও সরে যেতে হওয়ায় ক্ষোভ ঝরে তার কণ্ঠে।

সাবেক এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়ে ১২ মাস পর সরে দাঁড়াতে বলা খুবই হতাশাজনক। আমি বলব এটা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে কাউকে নিয়োগ দিতে চায়। এটা ক্রিকেটকে সাহায্য করবে না, ধারাবাহিকতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে না। ক্রিকেট বোর্ড, পুরো সিস্টেম, জাতীয় দল এবং অধিনায়কের ওপর চাপ তৈরি করবে এমন কাজ। গঠনতন্ত্র শক্ত হতে হবে। এটা (চাইলেই গঠনতন্ত্র বদল) শুধু পাকিস্তানেই হয়। আমি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি উত্থাপন করে যাব। এটা একটা তামাশা হয়ে গেছে। ’

news24bd.tv/সাব্বির