আবারও চঞ্চল চৌধুরীর আবেগঘন পোস্ট

আবারও চঞ্চল চৌধুরীর আবেগঘন পোস্ট

অনলাইন ডেস্ক

বাবা মৃত্যুর চার দিন পর আবারও আবেগঘন পোস্ট দিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বাবার পরলোকগমনের সেই হৃদয়বিদারক কথা তুলে ধরেন গুণী এই অভিনেতা।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর বাবা রাধা গোবিন্দ চৌধুরী (৯০)।

বাবার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে প্রায়ই স্মৃতিচারণ করছেন চঞ্চল চৌধুরী।

এখনও ভুলতে পারেননি বাবা হারানোর ব্যথা। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। সময়ের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:

কেবিন নং ৯০২
………………….

বাবাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালের এই কেবিনেই ভর্তি করেছিলাম।
যদিও বাবার আর কেবিনে থাকা হয়নি, কারণ শুরু থেকেই বাবাকে আইসিইউ তে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

ভর্তির দিনই ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন, এখান থেকে বাবার ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, যদি না সৃষ্টিকর্তা অবাক কিছু ঘটান। তারপর থেকে আমরা শুধু অপেক্ষা আর চেষ্টা করেছি বাবাকে ফিরিয়ে আনতে।

বাবা প্রায় ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন। ডাক্তারদের হিসেব মতো, যে কোনো সময় চলে যাওয়ার কথা বললেও, বাবা ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে বেঁচে ছিলেন।

সন্তান বা আত্মীয় পরিজন হিসেবে চোখের সামনে এই কষ্ট দেখা যায় না। একটা সময় প্রার্থনা করেছি বাবার জ্ঞান ফিরে আসুক, সুস্থ হয়ে যাক, বিনিময়ে আমরা সব কিছু করতে প্রস্তুত।

ঠিক সেই আমরাই শেষের দিকে এসে, বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রার্থনা করেছি, বিশ্বাস করেছি, একমাত্র মৃত্যুই বাবাকে এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ভাবনা আর বিশ্বাসের এই বৈপরীত্য আমি এখনো মানতে পারিনি। আমরাসহ বাবার ভালোবাসার মানুষগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৯০২ নং কেবিনে বসে থাকতাম বাবার জন্য।

এত ভীড়…বসার জায়গা হতো না...তারপরেও কেউ সেখান থেকে আসতে চাইতো না। বাবার কারণেই কেবিনটা মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল।

আমরা আট ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই কখনও এতদিন একসাথে থাকিনি। কত আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে যে দেখা হয়েছে কতদিন পরে, শুধু বাবার কারণেই। ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম, বাবাকে আর ধরে রাখতে পারব না।

ঠিক রাত ৮টার দিকে ডিউটি ডক্টর কেবিনে ফোন করে জানালেন, বাবার হার্ট বিট একদম নেমে যাচ্ছে...
সাথে সাথে আমরা দৌড়ে গেলাম আই সিইউতে।

সত্যিই……বাবার শরীরটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। না ফেরার দেশে চলে গেল আমাদের বাবা।

১২ ডিসেম্বর অচেতন অবস্থায় ভর্তি হয়ে ২৭ ডিসেম্বর ওই অবস্থাতেই বাবা চির বিদায় নিলেন। এই কয়দিন অন্তত আইসিইউ তে বাবার বেডের সামনে দাঁড়িয়ে বাবার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা দেখতাম, প্রাণটা আছে এই সান্ত্বনা নিয়ে ভেজা চোখে ফিরে আসতাম।

মনিটরে তাকিয়ে যখন দেখলাম বাবার জীবনটা থেমে গেছে, কিছু সময়ের জন্য আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না, দেখতে পাচ্ছিলাম না। তারপর সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পালা…একাউন্টস, বিল, ডেড বডি, ফ্রিজার ভ্যান……ডেথ সার্টিফিকেট……

আমার বাবা জীবন্ত মানুষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল বার বার…বার বার মন খুলে কাঁদতে চেষ্টা করছিলাম…পারছিলাম না, যদি কেউ দেখে ফেলে, ছবি তোলে॥

বাবার ডেড বডিটা যখন হাসপাতালের লিফট দিয়ে নামানো হচ্ছিল…ফ্রিজার ভ্যানে তোলা হচ্ছিল সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার নিথর শরীর, তখন খুব করে মনে করার চেষ্টা করছিলাম, বাবার সাথে আমার শেষ কি কথা হয়েছিল!!

ভাবতেই তো পারিনি বাবা চলে যাবে, তাই বাবার সাথে আমার কোন শেষ কথা হয়নি॥

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর