ঈমান সুদৃঢ় করার ১০ আমল

সংগৃহীত ছবি

ঈমান সুদৃঢ় করার ১০ আমল

অনলাইন ডেস্ক

আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা : আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোতে আল্লাহর বড়ত্বের ধারণা পাওয়া যায়, যা আল্লাহর ওপর মানুষের ঈমানকে আরো দৃঢ় করে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত, আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো জানা, মুখস্থ করা ও তার অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করা, তা ছাড়া মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম আত্মস্থ করার বিশেষ ফজিলত আছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম এক শটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৩৬),

কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করা : পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করলে শুধু জ্ঞানের পরিধিই বড় হয় না; বরং আল্লাহর প্রতি মুমিনের ঈমানও আরো বৃদ্ধি পায়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, মুমিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, আর তাদের কাছে যখন তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে, আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। (সুরা আনফাল, আয়াত : ২),

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সিরাতজ্ঞান অর্জন করা : নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মুমিনের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। নবীজি হলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মডেল। দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা অর্জনের নবীজি (সা.)-এর অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।

নবীজি (সা.)-এর অনুসরণে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করবেন আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১),

আর নবীজি (সা.)-এর অনুসরণের জন্য সিরাতজ্ঞান অর্জন করা আবশ্যকীয়, যা মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে সাহায্য করে।  


বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা : মহান আল্লাহ আমাদের জন্য গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নিয়োজিত করে রেখেছেন, সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই, নিয়ন্ত্রকও তিনিই, মহান আল্লাহর সৃষ্টিগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মুমিনের ঈমান আরো বেড়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০),

এমনিভাবে মানুষের নিজের অস্তিত্বের মধ্যেও মহান আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো বিবেকবান লোকদের ঈমান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, ইরশাদ হয়েছে, সুনিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে নিদর্শন, তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি দেখো না?’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০-২১),

অধিক পরিমাণ জিকির ও দোয়া : অধিক পরিমাণে জিকির করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান বাড়ে, ফলে অন্তর প্রশান্ত হয়, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরগুলো সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করে। ’ (সুরা : আর-রাদ, আয়াত : ২৮),

দ্বিনের সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া : ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের বিধি-বিধান, আকিদার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও এর ওপর আমল মানুষের দুনিয়া-আখিরাতকে সুন্দর করে, ঈমানকে মজবুত করে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রাখো যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল রয়েছেন, সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭)

ইহসান অবলম্বন করা : ‘ইহসান’ মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, নবীজি (সা.)-এর ভাষায় ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসান হলো, আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০),

ইহসানের আরেক অর্থ হলো, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা। এটিও মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, আল্লাহর প্রিয় করে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাখলুকের প্রতি ইহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন করতে, তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমাদের শিক্ষা গ্রহণ কর। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০),

আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া : ঈমান দৃঢ় করার অন্যতম মাধ্যম হলো, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা, এতে নিজের মধ্যেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, ঈমান বৃদ্ধি পাবে, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর পথে আহ্বানকারীদের প্রশংসা করেছেন, ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৩),

ইসলামী বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় পরিহার করা : ঈমানের দৃঢ়তা অর্জনে এর বিকল্প নেই। একটি ম্যাচের কাঠি যেমন কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দিতে পারে। তেমনি একটি ঈমান বিধ্বংসী কাজ ও বিশ্বাস মানুষের সব আমল অর্থহীন করে দিতে পারে। পবিত্র কোরআনে এর উদাহরণ হলো, ‘তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে তার এমন একটা খেজুর ও আঙুরের বাগান হোক, যার নিচ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত, তার জন্য তাতে সব রকম ফল আছে, আর তার বার্ধক্যও সমুপস্থিত, তার কতকগুলো সন্তান-সন্ততি আছে যারা কাজকর্মের লায়েক নয়, এ অবস্থায় বাগানের ওপর অগ্নি হাওয়া বয়ে গেল, যার ফলে সেটি জ্বলে গেল? আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ এভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা করে দেখ। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৬)

দুনিয়ার হাকিকত সম্পর্কে সচেতন হওয়া : দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়া অর্জনই মানুষের মূল লক্ষ্য হতে পারে না। মানুষ দুনিয়াতে ক্ষণিকের অতিথি মাত্র। পৃথিবীর ইতিহাসে দুনিয়াতে বহু রাজা-ধিরাজ অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু পৃথিবীতে তাদের কারো কারো কোনো চিহ্নই নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে দুনিয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন, ‘দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন আকাশ থেকে আমি পানি বর্ষণ করি যার সংস্পর্শে ঘন সন্নিবিষ্ট ভূমিজাত উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাত্থেকে ভক্ষণ করে মানুষ আর জীবজন্তু, অবশেষে জমিন যখন সোনালি রূপ ধারণ করে আর শোভামণ্ডিত হয়, আর তার মালিকগণ ভাবতে থাকে যে ওগুলো তাদের হাতের মুঠোয়, তখন রাত্রিকালে কিংবা দিনের বেলা আমার নির্দেশ এসে পড়ে আর আমি ওগুলো এমনভাবে ধ্বংস করে দিই, মনে হয় যেন গতকাল সেখানে কোনো কিছুই ছিল না, এভাবে আমি আমার নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করি ওই সমপ্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তাভাবনা করে বুঝতে চেষ্টা করে। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ২৪),

অতএব, ঈমান সুদৃঢ় করতে হলে দুনিয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে, আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে।