বনভান্তের ১০৪তম জন্ম উৎসবে পুণ্যার্থীর ঢল

বনভান্তের ১০৪তম জন্ম উৎসবে পুণ্যার্থীর ঢল

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

বনভান্তে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আর্যপুরুষ। তিনি হচ্ছেন মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির। রোববার ছিল তার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী।

২০১২ সালে মহাপরিনির্বাণ অর্থাৎ দেহত্যাগ লাভ পর বনভান্তেকে ছেড়ে এটি ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ১১তম জন্ম উৎসব। তাই উৎসবকে ঢেলে সাজাতে প্রস্তুত করা হয়েছিল নানা আয়োজন। আতশবাজির ঝলকানির মধ্যে দিয়ে মধ্যেরাতে কেক টেকে জন্ম উৎসব সূচনা করেন বনভান্তের শীর্ষ রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।

এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাস্থবির ও পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরের অধ্যক্ষ শাসন রক্ষিত মহাস্থবির উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সকাল ৯টায় রাজ বনবিহারের উত্তরের মাঠে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনার। মোমবাতি প্রজ্জলন ও ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দান, পিন্ড দান, পুষ্পাঞ্জলি উৎসর্গ, বিশ্বশান্তি প্যাগোডার উদ্দেশ্যে টাকা দানসহ নানাবিধ দানোৎসর্গ করা হয়। সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় ধর্মদেশনা প্রদান করেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ও বনভান্তের শীর্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। প্রার্থনায় অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অং সুই প্রু চৌধুরী ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, বালুখালী ইউপি সাবেক চেয়য়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমার।

অন্যদিকে বনভান্তের জন্ম উৎসবের প্রার্থনায় যোগ দিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো পূর্ণ্যার্থী। ফুল হাতে সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে উপস্থিত হয় রাজবন বিহারে।

এসময় নারী-পুরুষের পদাচারণায় জন সমুদ্রে পরিণত হয় পুরো বিহার এলাকা। শ্রদ্ধ আর ভালবাসায় ফুলে ফুলে ভরে যায় বনভান্তের সংরক্ষিত দেহধাতু অর্থাৎ মোমি। সন্ধ্যায় প্রার্থনা শেষে রাজবন বিহারের হাজার প্রদীপ প্রজ্জালন ও ফানুস উড়ানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে বনভান্দের জন্ম উৎসব।

উল্লেখ্য, দেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির রাঙামাটি রাজ বন বিহারের অধ্যক্ষ ও আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মোড়ঘোনা গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি ৯৩ বৎসর বয়সে মহাপরিনির্বাণ (দেহত্যাগ) লাভ করেন। বর্তমানে বনভান্তের মরদেহটি বিজ্ঞান ও বিনয় সম্মতভাবে পেটিকাবদ্ধ (বিশেষ কফিন) অবস্থায় রাঙামার রাজ বন বিহারে রাখা হয়েছে।