সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনা সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়: ইফতেখারুজ্জামান

সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনা সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়: ইফতেখারুজ্জামান

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির ২৭ দফায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের ঘোষণা এবং সেই সঙ্গে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাখাকে ‘সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।  বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের ২৭ দফা যেটা আছে সেটা আসলে তাদের উইশ লিস্ট’।

বিএনপির ২৭ দফায় উল্লেখিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান এবং তাদের দলের নেতৃত্বে আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্তদের রাখা প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে, আবার সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনা করছে।

এটা সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয়।  সব দেশেই রাজনৈতিক পদ্ধতি হলো, যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা নিজেদের দণ্ডিত মনে করেন না। প্রতিপক্ষ দুর্নীতি করে বলে মনে করে। আর যখন প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় থাকে, তখনও তারাও এভাবে ভাবে।
তারা (প্রতিপক্ষ) ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বলে। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেরও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।

২৭ দফাকে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে একটা উইশ লিস্ট উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, তারা বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখে? তাদের দলের যে ইতিহাস, তাদের যে অভিজ্ঞতা, তাদের সঙ্গে জনগণের যে অভিজ্ঞতা, সেটা বিবেচনায় নিলে বলা যায়-অনেক রাজনৈতিক দল ম্যানুফেস্টো করে। সেটা ক্ষমতায় গেলে চিত্রটা অন্যরকম হয়। সে হিসেবে এটা একটা উইশ লিস্ট। যদিও এর অনেকগুলো বিষয় বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন।

তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগ হয়েছে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিষয় হলো, অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়েছে কি না। আদালত থেকে তারেক রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের কথা বলা হয়েছে এবং খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। এরপরও তারা দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। এটা তাদের দলের নৈতিক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বা হচ্ছে, তারা নির্বাচনে যেতে পারবেন কি না, সেটারও সুনির্দিষ্ট আইন আছে। আইনের দৃষ্টিতে যে সাজাপ্রাপ্ত সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না ও জনপ্রতিনিধি হতে পারবে না। সে হিসাবে তারা তো ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, এটা আদালত ও বিচারের বিষয়। নৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি বলবো, এটা তাদের সাংঘর্ষিক অবস্থান। একদিকে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে, আবার অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনা করছে। এটা সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয়। তবে শুধু বিএনপি নয়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের জন্যই বিষয়টা একই রকম।

উল্লেখ্য, গত বছরে ডিসেম্বরে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ২৭ দফা প্রদান করে বিএনপি। যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুই বারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না ইত্যাদিসহ নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রেইনবো নেশন প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে 'অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ' শিরোনামে ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়, দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা হইবে না। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংগঠিত অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করিয়া একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দেশের বাহিরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হইবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হইবে। ’

news24bd.tv/desk